গাজায় মানবিক বিপর্যয়: সাহায্য ফুরিয়ে যাওয়ায় হাহাকার!

গাজায় মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সেখানকার বাসিন্দারা খাদ্য, ঔষধ এবং অন্যান্য জরুরি সামগ্রীর অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে জানিয়েছে, খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। খবর অনুযায়ী, গাজায় বসবাসকারী ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য পরিষেবা সরবরাহকারী ইউএনআরওয়া (UNRWA)-এর গুদামগুলো প্রায় খালি হয়ে গেছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের কাছে মজুত থাকা আটা এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীও ফুরিয়ে এসেছে।

জাতিসংঘের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও, দ্রুত অবনতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, ঔষধ সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে সেখানকার বাজারগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে এবং যা পাওয়া যাচ্ছে, তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

গাজার বিভিন্ন বাজারের চিত্র দেখলে বোঝা যায়, সেখানে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ কমে গেছে। টমেটোর দাম চারগুণ বেড়ে গেছে, যা বর্তমানে প্রায় ৯০০ টাকার (১ ডলার = ১১৩ টাকা ধরে)।

এছাড়া, চিনির দাম বেড়েছে সাত গুণ এবং আটার দাম ১০ থেকে ১৫ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। মাংস বা দুগ্ধজাত পণ্য সেখানে পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে।

গাজা শহরের একজন বাসিন্দা, যিনি পেশায় সাংবাদিক, জানিয়েছেন, “আমরা এখন দিনে দু’বেলা খাচ্ছি, কোনো দিন এক বেলা। খাবার প্রায় শেষ হয়ে গেছে।

জীবন ধারণের মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে, সেখানে কোনো চিকিৎসা বা ঔষধ নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার জল নেই, বিদ্যুৎ নেই। চারিদিকে আবর্জনা। গাজা যেন একটি রোগাক্রান্ত স্থানে পরিণত হয়েছে। মনে হচ্ছে, আমাদের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।”

সংকট মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেখানকার শিশুরা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে প্রায় ৩,৭০০ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে, যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি। এছাড়া, জরুরি স্বাস্থ্য সরঞ্জামেরও অভাব দেখা দিয়েছে।

এদিকে, ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বাধা দেওয়ার কারণ হিসেবে হামাসকে দায়ী করছে।

তাদের অভিযোগ, হামাস ত্রাণ চুরি করে তাদের যোদ্ধাদের মধ্যে বিতরণ করে অথবা তা বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করে।

তবে, ত্রাণ সংস্থাগুলো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ)-এ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইউএনআরওয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে।

এছাড়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ এনেছে।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *