গাজায় মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণের প্রথম দিনেই চরম বিশৃঙ্খলা, অনাহারে দিন কাটানোর পর।
গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনপুষ্ট একটি নতুন ত্রাণ বিতরণ প্রকল্পের প্রথম দিনেই চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার তেল আল-সুলতানে ত্রাণ বিতরণের জন্য নির্ধারিত স্থানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি খাবারের জন্য ঝাঁপিয়ে পরে।
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামক একটি সংস্থা এই ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে ছিল।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিশাল জনতা ত্রাণ কেন্দ্রের বেড়া ভেঙে ফেলছে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তা কর্মীদের।
কূটনীতিক মহলের মতে, এমনটা ঘটা “আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নয়”।
১১ সপ্তাহ ধরে চলমান ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবন চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। মানবিক ত্রাণ সহায়তা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাদ্যসংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
গত সপ্তাহে কিছু ত্রাণ প্রবেশ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশৃঙ্খলার কারণে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরে অল্প সংখ্যক গাজাবাসীকে নিরাপদে ত্রাণ নিতে দেয় হয়।
ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন। জিএইচএফ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত তারা প্রায় ৮ হাজার ফুড বক্স বিতরণ করেছে, যা প্রায় ৪ লক্ষ ৬২ হাজার মানুষের খাবারের সমান।
তাদের লক্ষ্য হলো, চলতি সপ্তাহের মধ্যে গাজার প্রায় ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ১২ লাখ মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া।
ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের পরিচালক আমজাদ আল-শাওয়া বলেন, “আমরা আগেই এই বিষয়ে সতর্ক করেছিলাম। ইসরায়েল যদি মনে করে অবরোধের মাধ্যমে তারা অনাহার সৃষ্টি করে ত্রাণ বিতরণের এই পদ্ধতি সফল করতে পারবে, তাহলে তারা ভুল করছে।”
তবে বিতরণের শুরুতেই দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। জিএইচএফ জানিয়েছে, সোমবার থেকেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে, কিন্তু তাদের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে হাতে গোনা কয়েকজন লোক ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে, আর খালি জায়গায় খাদ্য বোঝাই কয়েকটি প্যালেট রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ত্রাণ বিতরণের জন্য জিএইচএফ আরও তিনটি স্থান প্রস্তুত করছে, যার মধ্যে দুটি গাজার দক্ষিণে এবং একটি কেন্দ্রে অবস্থিত।
বিতরণের স্থানগুলো এমন একটি অঞ্চলে তৈরি করা হয়েছে, যা সম্প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর বড় ধরনের ‘সরিয়ে নেওয়ার’ নির্দেশের আওতায় ছিল।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা এই নতুন ব্যবস্থার সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, গাজার উত্তরে কোনো ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েল সরাসরি পরিবারগুলোর কাছে খাদ্য বিতরণের অনুমতি দিতে এখনো রাজি নয়। তাদের কাছে হাজার হাজার ট্রাক প্রস্তুত থাকলেও সেগুলো গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।
জাতিসংঘ ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা (ইউএনআরওয়া) জানিয়েছে, অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে তারা প্রস্তুত রয়েছে এবং অনুমতি পাওয়া মাত্রই পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করতে পারবে।
ইউএনআরওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, “গাজা উপত্যকায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা খুবই সামান্য। এমনকি একটি ছোট এলাকার বাইরে বসবাসকারী পরিবারগুলোর কাছেও তা পৌঁছায়নি।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নতুন এই ত্রাণ বিতরণে জড়িত মানবিক সংস্থাগুলোর নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। তবে জিএইচএফ-এর ছবিগুলোতে দেখা যায়, মিশিগান-ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা ‘রাহমা ওয়ার্ল্ডওয়াইড’-এর খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
এই সংস্থাটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার কথা জানায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন