গাজায় কয়েক সপ্তাহ পর জরুরি ত্রাণ পৌঁছানো শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। মার্চ মাসের শুরু থেকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ প্রায় বন্ধ ছিল।
বুধবার কিছু খাদ্য সামগ্রী সেখানে পৌঁছানো হয়েছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার আরও বেশি ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা চলছে। ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করা না হলে গাজার একটা বড় অংশ দুর্ভিক্ষে পতিত হতে পারে।
২রা মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছিল। তাদের দাবি ছিল, হামাস এই ত্রাণ চুরি করে তা থেকে লাভবান হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার বৃহস্পতিবার এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘গাজায় আমাদের দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আজকের দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবন রক্ষাকারী ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো অবশেষে আবার চলতে শুরু করেছে।’
গাজার পরিবহন সমিতির প্রধান নাহিদ শুহাইবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার একশোর বেশি ট্রাকে করে আটা, শিশুদের খাদ্য এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়।
গাজার বেকারি মালিক কামেল আজুর জানান, কিছু আটা দক্ষিণ অঞ্চলের বেকারিগুলোতে বিতরণ করা হবে, যাতে তারা দ্রুত কাজ শুরু করতে পারে। শুহাইবার আরও জানান, তিনি আশা করছেন, বৃহস্পতিবারও একই সংখ্যক ট্রাক ত্রাণ নিয়ে প্রবেশ করবে। তবে তিনি এও জানান, বুধবার ক্ষুধার্ত বাসিন্দারা দুটি ট্রাক থেকে ত্রাণ লুট করেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, খান ইউনিস এবং গাজা শহরে পাঁচটি রান্নাঘর পুনরায় চালু হয়েছে, তবে খাদ্য সরবরাহের অভাবে আরও পাঁচটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
ইসরায়েলি সংস্থা কোঅর্ডিনেশন অব গভর্মেন্ট অ্যাক্টিভিটিজ ইন দ্য টেরিটরিজ (সিওজিএটি)-এর তথ্য অনুযায়ী, সোমবার ৫টি, মঙ্গলবার ৯৩টি এবং বুধবার ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রধান ক্যাথরিন রাসেল এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী নিয়ে আসা কয়েকটি ট্রাক প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে এখনও পৌঁছায়নি। গাজার ভেতরে আমাদের সরবরাহ শেষ হয়ে যাচ্ছে, সময়ও ফুরিয়ে আসছে।’
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ও ত্রাণ সংস্থাগুলোর মধ্যে গাজায় ত্রাণ বিতরণের পথ নিয়ে মতবিরোধের কারণেও বিলম্ব হচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানে দুজাররিক বুধবার জানান, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আমাদের দলগুলোকে একটিমাত্র পথে যেতে অনুমতি দিয়েছে, যা অত্যন্ত জনাকীর্ণ এবং অনিরাপদ ছিল। আমরা আশঙ্কা করছি, সেখানে লুটপাট হতে পারে।’
ওসিএইচএ আরও জানায়, ‘স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রী বা জ্বালানির মতো জরুরি জিনিসপত্র ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করেনি।’
এদিকে, গাজায় ত্রাণ বিতরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনাকে পর্যাপ্ত বলে মনে করছেন না।
ত্রাণ সরবরাহ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অভিযান আরও জোরদার করছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ আরও ছোট এলাকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।
ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজার ৮০ শতাংশ মানুষ হয় বাস্তুচ্যুত হয়েছে অথবা ইসরায়েলি সামরিক জোনে অবস্থান করছে।
এতে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, যার ফলে সেখানে তীব্র স্থান সংকট দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো হাসপাতালগুলোতে হামলার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বুধবার আল-আওদা হাসপাতালে হামলা হয়, যা ঐ এলাকার একমাত্র আংশিকভাবে চালু থাকা হাসপাতাল।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালও কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, উত্তর গাজার ইন্দোনেশীয় হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চার লাখেরও বেশি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
দক্ষিণ গাজায় ইউরোপীয় হাসপাতাল গত সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখনও বন্ধ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) জানিয়েছে, তারা রাফায় তাদের ফিল্ড হাসপাতালের জন্য একটি ট্রাকে করে চিকিৎসা সামগ্রী পেয়েছে।
তবে গত দশ সপ্তাহের ঘাটতি পূরণ করতে তাদের আরও সময় লাগবে।
আইসিআরসি বলেছে, ‘আসন্ন দিনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
পানি সংকটও একটি বড় সমস্যা।
গাজার উত্তরে অবস্থিত বৃহত্তম পানি শোধনাগারটি এমন একটি এলাকায় অবস্থিত, যা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরে যেতে বলা হয়েছে।
অনেক মানুষ দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকা আল-মাওয়াসিতে আশ্রয় নিয়েছে, তবে সেখানে পানির নেটওয়ার্ক নেই এবং তারা প্রধানত পানি সরবরাহের জন্য ট্রাকের ওপর নির্ভরশীল।
গাজা সিটি মুখপাত্র আসীম আলনাবিহ্ সিএনএনকে জানান, ‘জ্বালানি সরবরাহ কমে যাওয়ায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে।’
বাস্তুচ্যুতি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন