গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একদিনে ৫৪ জন নিহত হয়েছে, মানবিক সংকট গভীর।
গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে ভয়াবহ বিমান হামলায় একদিনে ৫৪ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় একটি হাসপাতালের মর্গে মরদেহগুলো জমা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের এই হামলায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে, বুধবার রাতেও গাজার উত্তরে ও দক্ষিণে ব্যাপক বোমা হামলা চালানো হয়, যাতে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে কাতারের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল-আরাবির সাংবাদিক হাসান সামুর ও তার পরিবারের ১১ সদস্যও রয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এসব হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
অন্যদিকে, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামাসকে নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হামাসকে ধ্বংস করতে ইসরায়েলি বাহিনী কয়েক দিনের মধ্যেই গাজায় আরও শক্তিশালী অভিযান চালাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের মধ্যেই এই হামলাগুলো চালানো হলো। যদিও ট্রাম্প ইসরায়েলে যাননি, তবে ধারণা করা হচ্ছিল তার এই সফরের মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধবিরতি অথবা মানবিক সহায়তা পুনরায় চালুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ তৃতীয় মাসে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, গাজা দখলের ইসরায়েলি পরিকল্পনা সেখানকার কয়েক লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার শামিল। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলে হামলার পর থেকে এই সংঘাত শুরু হয়। হামাসের হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয়। এরপর ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫৩,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৩,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
বর্তমানে হামাসের হাতে এখনো ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৩ জন জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কারণে গাজার বিশাল এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ওষুধসহ সব ধরনের সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েল অবরোধ প্রত্যাহার না করলে এবং সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং আরও ১০ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসরায়েলের গাজা দখলের পরিকল্পনা এবং বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংসের পাশাপাশি সব ধরনের আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টিকে গণহত্যা কনভেনশনের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বাক্ষরকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েল অবশ্য গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একইসঙ্গে মানবাধিকার সংস্থাটি হামাসের প্রতি তাদের হাতে থাকা ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।