গাজায় অবরুদ্ধ জীবন: জাতিসংঘের বেকারি বন্ধ, শিশুদের কান্না!

গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র: জাতিসংঘের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ, মানবিক বিপর্যয় ঘনিয়ে আসার শঙ্কা।

গাজা উপত্যকায় জাতিসংঘের খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচি তাদের অবশিষ্ট রুটি তৈরির কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে, সেখানকার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশুদের খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র হওয়ায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme – WFP) জানিয়েছে, খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় তারা তাদের কার্যক্রম সীমিত করতে বাধ্য হচ্ছে। এর আগে, গত মাসে তারা তাদের ছয়টি বেকারি বন্ধ করে দেয়।

বর্তমানে গাজায় তাদের অধীনে থাকা অবশিষ্ট ১৯টি বেকারিও বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের মুখপাত্র ওলগা চেরেভকো জানিয়েছেন, এই বেকারিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার কয়েক লক্ষ মানুষ রুটির মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

গাজার বাজারে খাদ্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে এবং সেখানকার বাসিন্দারা চরম খাদ্য সংকটে দিন কাটাচ্ছে।

গাজার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মাদ আল-কুরদ বলেন, “আমাদের শিশুরা রাতে খাবার ছাড়াই ঘুমোতে যায়। আমরা তাদের ধৈর্য ধরতে বলি এবং সকালে রুটি আনার মিথ্যা আশ্বাস দিই। কিন্তু বাস্তবে আমাদের কাছে কিছুই নেই।”

অন্যদিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক সংস্থা কোঅর্ডিনেশন অব গভর্মেন্ট অ্যাক্টিভিটিজ ইন দ্য টেরিটরিজ (COGAT) এর মতে, যুদ্ধবিরতির সময় প্রায় ২৫ হাজার ট্রাকের মাধ্যমে গাজায় প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টন ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ করেছে।

তাদের দাবি, যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় যত ত্রাণ গেছে, তার এক তৃতীয়াংশ এই সময়ে প্রবেশ করেছে।

তবে, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও ত্রাণকর্মীরা বলছেন, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ এবং বিতরণে তারা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের পরিস্থিতির মিল নেই।

তাদের মতে, গাজায় পৌঁছানো ত্রাণের পরিমাণ অনেক কম।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়, যার ফলস্বরূপ উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এতে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।

যুদ্ধ বন্ধের জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরুর কথা থাকলেও তা এখনো পর্যন্ত শুরু হয়নি। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের শর্ত দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, হামাস তাদের বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

বর্তমানে গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে গাজার মানুষ খাদ্য সংকটের হাত থেকে মুক্তি পায়।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *