গাজায় আবারও বোমা বর্ষণ, দুর্ভিক্ষের শিকার ফিলিস্তিনিরা: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা
গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় ক্রমেই বাড়ছে। ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশুদের জীবনযাত্রা চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে যেমন চলছে নির্বিচার বোমা বর্ষণ, তেমনই খাদ্য সংকটের কারণে সেখানকার মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতিতে কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
গাজার ১৭ বছর বয়সী কিশোর রামের কথা ধরুন। এক সাক্ষাৎকারে রামের পরিবার এবং তার এলাকার মানুষের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে।
রাম জানিয়েছে, তাদের পরিবারে খাবার কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই। সেখানকার বাজারে সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া।
এমনকি, তাদের পরনের কাপড় কেনারও সামর্থ্য নেই।
পবিত্র রমজান মাসে যখন মুসলিম বিশ্ব রোজা রাখছিলেন, ঠিক সেই সময়ে ইসরায়েল গাজায় বোমা হামলা চালায়। এতে নারী ও শিশুসহ বহু ফিলিস্তিনি নিহত হন।
হামলার কারণে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে তারা উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হয়েছে।
রামের ভাষায়, “আমরা সবকিছু হারিয়েছি। এখন রাস্তায় দিন কাটাই। চারপাশে ধ্বংসস্তূপ।
হঠাৎ করেই সব কিছু ঘটে গেল, যা আমরা কল্পনাও করিনি।”
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার জানুয়ারি মাসের তুলনায় বর্তমানে দ্বিগুণ হয়েছে।
অপুষ্টির কারণে এরই মধ্যে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের এই পরিস্থিতি তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো অঞ্চলের মানুষকে অনাহারে রেখে হত্যা করা একটি যুদ্ধাপরাধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
তবে, অনেক পশ্চিমা দেশ এই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে না। বরং তারা নেতানিয়াহুকে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ খাদ্য কিনতে পারছে না।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সেখানে ত্রাণ পাঠাতে চাইলেও, ইসরায়েলের বাধার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলোর নীরবতা এবং ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞা। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের এই হামলা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
গাজায় মানবিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে, ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা