গাজায় যুদ্ধবিরতি: মুক্তি পেলেন ৭ জিম্মি, স্বজনদের চোখে জল!

ঢাকা, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে হামাস সাত জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। সোমবার এই মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা দুই বছর ধরে চলা ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

এই যুদ্ধে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং অনেকে এখনো বন্দী অবস্থায় রয়েছেন। মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা এবং তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ইসরাইলে নিয়ে যাওয়া হবে।

খবর অনুযায়ী, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে দ্বিতীয় একটি দলের জীবিত জিম্মিদের হস্তান্তরের জন্য রেড ক্রস দক্ষিণ গাজায় পৌঁছেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার দিনের শেষে মোট ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

একই সঙ্গে, ইসরাইল প্রায় ১,৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে। এছাড়া, নিহত ২৮ জন জিম্মির মরদেহও হস্তান্তর করার কথা রয়েছে, যদিও সময় এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

টেল আভিভে, জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের প্রিয়জনদের মুক্তির খবরে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। ইসরাইলি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে এই খবর প্রচার হওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের হাতে বন্দী থাকা শত শত বন্দীর মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।

যদিও হামাস ও গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে, জিম্মি ও বন্দীদের এই বিনিময় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধের আশা জাগিয়েছে। যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোরও সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে কয়েক লক্ষ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন এবং খাদ্য সংকটে ভুগছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অঞ্চলে পৌঁছেছেন এবং অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-প্রস্তাবিত একটি শান্তি চুক্তি এবং যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায়, যেখানে বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের পাল্টা আক্রমণে ৬৭,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে, এই সংখ্যায় বেসামরিক ও যোদ্ধা—উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।

জাতিসংঘের মতে, গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

জিম্মিদের মুক্তি ইসরাইলের জন্য একটি কঠিন অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাবে। তাঁদের মুক্তির দাবিতে ইসরাইলিরা হলুদ পিন ও ফিতা পরে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং প্রতি সপ্তাহে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, গত সপ্তাহে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। জিম্মিদের মুক্তির ফলে অনেক ইসরাইলি নাগরিকের কাছে যুদ্ধের তীব্রতা কমে আসবে।

ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি কবে হবে, তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি। মুক্তি পেতে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে রয়েছেন প্রায় ২৫০ জন, যাঁরা ইসরাইলের ওপর হামলার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

তাঁদের মধ্যে ১,৭০০ জনকে গাজা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁদের হয় পশ্চিম তীরে ফেরত পাঠানো হবে, না হয় নির্বাসনে পাঠানো হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরাইল ও মিশরে যাবেন। সেখানে তিনি জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে ভাষণ দেবেন।

যুদ্ধ শেষ হয়েছে।

ট্রাম্প

যদিও তাঁর যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাস ও গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ইসরাইলের দাবি অনুযায়ী হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু হামাস তা করতে রাজি নয় এবং তারা চায় ইসরাইল গাজা থেকে তাদের সৈন্য সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করুক।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজা শাসন করবে এবং ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটরা দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনা করবেন। তবে হামাস বলছে, গাজার সরকার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।

পরে, সোমবার ট্রাম্প মিশরে যাবেন, যেখানে তিনি এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গাজা ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে ২০টির বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে একটি শীর্ষ বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের একটি ভূমিকা রাখার কথা রয়েছে, যদিও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে এর বিরোধিতা করে আসছেন।

তবে এর জন্য কর্তৃপক্ষের একটি ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি প্রয়োজন, যা সম্পন্ন হতে কয়েক বছর লাগতে পারে।

পরিকল্পনায় গাজায় একটি আরব-নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন এবং মিশর ও জর্ডান কর্তৃক প্রশিক্ষিত ফিলিস্তিনি পুলিশ মোতায়েনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই বাহিনী মোতায়েন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইলি বাহিনী ওই এলাকা ত্যাগ করবে।

বর্তমানে প্রায় ২০০ মার্কিন সেনা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য ইসরাইলে অবস্থান করছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরাইল এখন পর্যন্ত গাজায় ১,৯০,০০০ মেট্রিক টন ত্রাণ পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে। গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা ইসরাইলি সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, “গাজার একটি বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।” তিনি আরও জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে মৌলিক চিকিৎসা ও অন্যান্য পরিষেবা পুনরুদ্ধার, হাজার হাজার টন খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ এবং ধ্বংসস্তূপ সরানোর পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *