গাজায় যুদ্ধবিরতির পর ধ্বংসস্তূপে ফেরা ফিলিস্তিনি, ত্রাণ ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর সেখানকার বাস্তুচ্যুত হওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। বুলডোজারগুলো যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু ধ্বংসের ভয়াবহতা এখনো স্পষ্ট।
অন্যদিকে যেমন বাস্তুহারা মানুষগুলো ফিরছে, তেমনই ত্রাণ সহায়তা বাড়ানো এবং সেখানকার ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সংবাদ সংস্থা এপি’র খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলকে আরও বেশি সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে ত্রাণ সংস্থাগুলো, যাতে গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহ করা যায়। এরই মধ্যে প্রায় ২০০ মার্কিন সেনা ইসরায়েলে পৌঁছেছে, যাদের কাজ হবে জিম্মিদের উদ্ধারে সহায়তা করা এবং হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করা।
মার্কিন সেনারা একটি কেন্দ্র স্থাপন করবে, যা ত্রাণ সরবরাহ, লজিস্টিক এবং নিরাপত্তা সহায়তা প্রদানের কাজ করবে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জানিয়েছেন, তিনি গাজায় গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং এই সহায়তা কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে, তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “গাজায় কোনো মার্কিন সেনা সরাসরি মোতায়েন করা হবে না।”
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় খাদ্য বিতরণের জন্য ১৪৫টি কেন্দ্র পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইসরায়েল অনুমতি দিলে শীঘ্রই এই কার্যক্রম শুরু হবে।
উল্লেখ, গত মার্চ মাস পর্যন্ত জাতিসংঘের সংস্থাগুলো খাদ্য বিতরণের জন্য ৪০০টি কেন্দ্র পরিচালনা করত।
ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ জরুরি হলেও, তাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঘরবাড়ি নির্মাণ করা। ইউনিসেফের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “ফিরে আসা মানুষগুলো তাদের বাড়িঘরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে দেখবে। তাদের এলাকাগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যুদ্ধবিরতিই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন ব্যাপক মানবিক সহায়তা, যা গত দুই বছরে সংঘটিত ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলা করতে পারবে।”
এদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে সোমবারের মধ্যে গাজায় আটক ৪৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাস যদি অস্ত্র ত্যাগ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ইসরায়েল পুনরায় অভিযান শুরু করতে পারে।
সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, গাজার ৭৫ শতাংশের বেশি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ প্রায় ২৫টি আইফেল টাওয়ারের সমান।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্ব ব্যাংকের এক মূল্যায়নে দেখা গেছে, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে, গৃহনির্মাণে ১৬ বিলিয়ন এবং স্বাস্থ্যখাতে ৬.৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৭,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১,৭০,০০০ জন আহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক।
যুদ্ধ শুরুর আগে, হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল, যাতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গাজায় একটি সমন্বয় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যা একটি স্থায়ী সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করবে। তবে, সেখানে কোনো মার্কিন সেনা সরাসরি কাজ করবে না।
যুদ্ধবিরতির পর গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। হামাস কি অস্ত্র ত্যাগ করবে? ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার হলে গাজার শাসনভার কার হাতে যাবে? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস