মা নেই, যুদ্ধ চলছেই: গাজায় মেয়ের চোখে শোকের ছবি!

গাজায় যুদ্ধের ভয়াবহতা: মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে এক কন্যার শোকগাথা।

যুদ্ধ আর সীমান্তের মাঝে, প্রিয় মাকে হারিয়েছেন গাজার এক কন্যা। মায়ের মৃত্যুর এক বছর পূর্তিতে, গভীর শোক আর বেদনার সাক্ষী হয়ে রইল সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা।

গত বছরের ৭ই মে, যখন ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং-এর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, ঠিক তখনই আসে সেই দুঃসংবাদ – মিশরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে।

গাজায় তখন যেন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে যুদ্ধাহত মানুষের আর্তনাদ, খাবার আর পানির জন্য হাহাকার, আর ক্রমাগত বোমা হামলায় ঘরবাড়ি হারা মানুষের আহাজারি – এসবের মাঝেই যেন মায়ের জীবনাবসান।

ফুসফুসের জটিল রোগে আক্রান্ত মা, যিনি শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন, যুদ্ধের কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। বিদ্যুতের অভাবে তাঁর অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা ছিল, যা তাঁর জীবনকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিল।

যুদ্ধের শুরুতেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার ফলে জেনারেটরগুলোও ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ে। চিকিৎসার অভাবে অসুস্থ মায়ের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে।

বারবার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে তাঁদের – উত্তর গাজার নিজেদের বাড়ি থেকে ভাইয়ের বাড়ি, সেখান থেকে আত্মীয়ের বাড়িতে। কিন্তু ইসরায়েলি বোমারু বিমান তাদের পিছু ছাড়েনি।

শেষ পর্যন্ত তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন দেইর আল-বালাহ-তে।

যুদ্ধের ভয়াবহতা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, খাবার ও ওষুধের চরম সংকট দেখা দেয়। অনেক সময় খাবার রান্নার গ্যাসও পাওয়া যেত না।

মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ফুরিয়ে গিয়েছিল, এমনকি তাঁর অক্সিজেন সরবরাহ করার মতো বিদ্যুতের ব্যবস্থাও ছিল না। অবশেষে, অনেক চেষ্টার পর, মা’কে চিকিৎসার জন্য মিশরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

যাওয়ার আগে মেয়ের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়, যা ছিল তাঁদের জীবনের শেষ সাক্ষাৎ।

মিশরে যাওয়ার পরেও মায়ের দুশ্চিন্তা কমেনি। তিনি সবসময় গাজায় তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন।

খবর পাওয়ার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন, যদিও নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা সম্ভব হতো না। মেয়ের কাছে তিনি জানতে চাইতেন, তাঁরা কেমন আছেন, নিরাপদে আছেন কিনা।

গাজায় তখন মৃত্যুর মিছিল। হাসপাতালে আহত মানুষের কান্না, স্বজন হারানোর বেদনা – এসব দৃশ্য প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে যেন গা সয়ে গিয়েছিল।

মা হারানোর শোক বুকে নিয়েও, জীবিত থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁদের। একদিকে খাবারের অভাব, অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ – এই পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকাটাই যেন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায়, তাঁদের পরিবার এখনও টিকে আছে। তাঁদের পুরনো বাড়িতে মায়ের স্মৃতিচিহ্নগুলো সাবধানে আগলে রেখেছেন তাঁরা।

সম্প্রতি, একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মানুষের উপর বোমা হামলা চালানো হয়, যেখানে বহু মানুষ নিহত হয়।

মায়ের একটাই স্বপ্ন ছিল, যুদ্ধ থামুক, আর তিনি যেন তাঁর সন্তানদের আবার দেখতে পান। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *