গাজায় ঈদ: শোকের ছায়া, ফিলিস্তিনিদের জীবনে যুদ্ধ-দুর্দশা!

গাজায় শোকের ঈদ: যুদ্ধ আর খাদ্য সংকটে ফিলিস্তিনিদের ঈদ উদযাপন।

গাজা উপত্যকায় মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর পালিত হচ্ছে চরম দুঃখ আর অনিশ্চয়তার মধ্যে। সাধারণত ঈদ মানে আনন্দ, নতুন পোশাকে সেজে ওঠা, প্রিয়জনদের সাথে খাওয়া দাওয়ার উৎসব। কিন্তু এবারের ঈদ যেন এক বিভীষিকা নিয়ে এসেছে এখানকার মানুষের জন্য।

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে ঘরবাড়ি, আর খাবার ও ত্রাণ সামগ্রীর অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ।

ঈদের নামাজ আদায় করতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে অনেকেই তাদের স্বজন হারানোর বেদনা প্রকাশ করেছেন। তাদের চোখে-মুখে ছিল প্রিয়জন হারানোর শোক, আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা।

ইসরায়েলি হামলায় ইতোমধ্যেই অনেকের পরিবারের সদস্য নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে নারী ও শিশুরাই বেশি। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের ঈদ আনন্দের বদলে এখন টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতির আশা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। হামাস জানিয়েছে, তারা কাতার ও মিশরের দেওয়া নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে। তবে উভয় পক্ষের শর্তগুলো এখনো স্পষ্ট নয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আলোচনা চললেও সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করা এবং গাজা থেকে তাদের নেতাদের সরিয়ে নেওয়ার শর্ত দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথাও উল্লেখ করেছেন, যেখানে গাজার বাসিন্দাদের অন্য দেশে পুনর্বাসিত করার প্রস্তাব রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল, যা সেখানকার মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ঈদের দিনেও ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত ছিল, যাতে নারী ও শিশুসহ বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

খান ইউনিসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৯ জন শিশু এবং ৩ জন নারী ছিল।

রাফায় উদ্ধারকর্মীরা ১০টি মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ জন ছিলেন জরুরি বিভাগের কর্মী।

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি সড়ক নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল সরকার।

সমালোচকরা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে জেরুজালেমের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে, যা ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পথে বাধা সৃষ্টি করবে।

গাজায় যুদ্ধের সূচনা হয় গত বছরের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়।

এতে ১,২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।

ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে এ পর্যন্ত ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অনেক।

হামাসের হামলায় নিহতদের মধ্যে যেমন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন, তেমনি ইসরায়েলি হামলায়ও ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

বর্তমানে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক।

খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে সেখানকার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *