গাজায় দুর্ভিক্ষের গুরুতর ঝুঁকি দেখা দিয়েছে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞ এবং ত্রাণকর্মীরা। গত কয়েক মাস ধরেই তাঁরা এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন।
জাতিসংঘের (UN) কর্মকর্তা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি ইসরায়েল গাজায় অবরোধ কিছুটা শিথিল করলেও, সেখানকার পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েলি অভিযান শুরুর ২১ মাস পরেও সেখানকার মানুষ চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ বাইরের সাহায্য এর উপর নির্ভরশীল। ইসরায়েলি অভিযানের কারণে স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
অবরোধ, চলমান যুদ্ধ এবং সেখানকার বিশৃঙ্খলার কারণে খাদ্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (World Food Programme) বলছে, গাজায় খাদ্য সংকট এক নতুন এবং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১ লক্ষ মহিলা ও শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
গাজার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ দিনভর খাবার পাচ্ছে না। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, অপুষ্টি ও খাদ্য সংকটের কারণে এ পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু। তবে, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি এলাকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ কবলিত ঘোষণা করতে হলে কিছু কঠিন শর্ত পূরণ করতে হয়। সাধারণত, কোনো এলাকার অন্তত ২০ শতাংশ পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা চরমভাবে কমে গেলে, অথবা শিশুদের মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি তীব্র অপুষ্টিতে ভুগলে, অথবা প্রতিদিন প্রতি ১০,০০০ জনে ২ জন বা তার বেশি মানুষ অনাহারে মারা গেলে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়।
গাজায় তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের বিধিনিষেধের কারণে অনেক সমস্যা হচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থাগুলি বলছে, দুর্ভিক্ষের ঘোষণার পরও অনেক সময় ত্রাণ সরবরাহ পর্যাপ্ত হয় না। কারণ, আন্তর্জাতিক সহায়তা বাজেট সীমিত এবং যুদ্ধ ও রাজনৈতিক কারণে অনেক সময় সাহায্য পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ে।
গাজায় ত্রাণ পাঠানোর ক্ষেত্রেও নানা জটিলতা রয়েছে। যদিও ইসরায়েল কিছু পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন, সেখানে বর্তমানে আসছে অনেক কম।
এছাড়া, গাজার ভেতরে খাদ্য বিতরণেও সমস্যা হচ্ছে, কারণ সেখানে প্রায়ই গোলাগুলি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দেওয়ার অনেক আগেই অনেক মানুষের মৃত্যু হয়ে যায়। অপুষ্টি, রোগ এবং অন্যান্য অভাবের কারণে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়াই এর প্রধান কারণ।
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার হাসপাতালগুলো আহত এবং অসুস্থ মানুষের চাপে জর্জরিত।
ফলে অপুষ্টির শিকার মানুষদের শনাক্ত করা এবং মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দারিদ্র্যের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। তাই, গাজার এই মানবিক বিপর্যয় বাংলাদেশের মানুষের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করতে হবে এবং সেখানকার মানুষের জীবন বাঁচাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: