গাজায় দুর্ভিক্ষ: ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে বিশ্ব!

গাজায় দুর্ভিক্ষ: খাদ্য সংকটে জর্জরিত গাজা সিটি

বিশ্বের খাদ্য সংকট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী প্রধান সংস্থা ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা সিটিতে দুর্ভিক্ষ চলছে।

সংস্থাটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করা না হলে, খান ইউনিস ও দেইর আল-বালাহ শহরেও এই দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিল।

অবশেষে, আইপিসি’র এই ঘোষণার মাধ্যমে সেই আশঙ্কাই যেন সত্যি হলো।

সংস্থাটি জানিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই মাসের শুরু থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে গাজায় খাদ্য নিরাপত্তা ও অপুষ্টির পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অবনতি হয়েছে।

তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আগামী এক মাসের মধ্যে গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে পড়বে।

তবে ইসরায়েলের সামরিক কর্তৃপক্ষ, যারা গাজায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে, তারা আইপিসি’র এই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা ও পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে অভিহিত করেছে।

তাদের দাবি, গাজায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি নেই এবং তারা সম্প্রতি সেখানে ত্রাণ সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়েছে।

দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আইপিসি’র কিছু মানদণ্ড রয়েছে।

কোনো এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করার জন্য নিম্নলিখিত তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে হয়:

  • অন্তত ২০ শতাংশ পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা চরমভাবে কমে যাওয়া অর্থাৎ তারা কার্যত অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
  • ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে অথবা তাদের বাহুর মধ্যভাগের মাপ অনুযায়ী অন্তত ১৫ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার।
  • প্রতি ১০,০০০ জনে অন্তত দুইজন অথবা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে চারজন প্রতিদিন অনাহার বা অপুষ্টিজনিত কারণে মারা যাচ্ছে।

গাজায় তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা রয়েছে।

ইসরায়েল সেখানে প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

ফলে, সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আইপিসি’র পাশাপাশি ‘ফ্যামিন রিভিউ কমিটি’ (এফআরসি)-ও গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এফআরসি খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি স্বাধীন দল, যারা আইপিসিকে নিয়মিতভাবে সহায়তা করে থাকে।

সাধারণত, দুর্ভিক্ষের সময় মৃত্যুর কারণ হিসেবে শুধু অনাহারকে চিহ্নিত করা কঠিন।

অপুষ্টি, রোগ এবং অন্যান্য অভাবের কারণেও অনেক মানুষ মারা যায়।

এসব মৃত্যু খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষের কারণে হওয়া অতিরিক্ত মৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয়।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় দুর্ভিক্ষের খবরকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং হামাস এই ধরনের ‘মিথ্যা’ খবর ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *