গাজায় যুদ্ধ: জাতিসংঘের প্রধানের ‘নিষ্ঠুরতম’ মন্তব্যে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ!

গাজায় মানবিক বিপর্যয়: দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে ফিলিস্তিনিরা, জাতিসংঘ মহাসচিবের সতর্কবার্তা।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজায় চলমান সংঘাতের ‘সবচেয়ে নিষ্ঠুর’ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন। ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ও অবরোধের কারণে সেখানকার ফিলিস্তিনিরা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন, প্রায় ৮০ দিন ধরে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সাহায্য আটকে রেখেছে, যা মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়িয়েছে।

গুতেরেসের মতে, বর্তমানে গাজার পুরো জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও ইসরায়েল কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে দিয়েছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ সহায়তা অনুমোদিত হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় এক ফোঁটা জলের মতো।’

জাতিসংঘ প্রধানের ভাষ্যমতে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযান তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং এতে ব্যাপক মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। সেখানকার মানবিক সাহায্যকর্মীদের কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা হয় ইসরায়েলের সামরিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, অথবা বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে।

গাজায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে সেখানকার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সেখানকার স্থানীয় কমিউনিটি রান্নাঘরে সামান্য খাবার সংগ্রহের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের।

গাজা সিটি থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, গত কয়েকদিনে যে পরিমাণ খাদ্য সহায়তা প্রবেশ করেছে, তা সেখানকার মানবিক সংকট মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ ও বোমা হামলার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এদিকে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৭৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৩,৮২২ জনের বেশি ফিলিস্তিনি।

আহত হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজারের বেশি, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

ইসরায়েল দাবি করেছে, সোমবার থেকে কেরেম আবু সালেম ক্রসিং হয়ে প্রায় ৩০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে জাতিসংঘের তথ্যমতে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতা ও সেখানকার বিশৃঙ্খলার কারণে এসবের এক-তৃতীয়াংশ ত্রাণ গুদাম পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতিদিন ৫০০টির বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত।

বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি নতুন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা রয়েছে, যা ‘গাজা মানবিক ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) পরিচালনা করবে। এই পরিকল্পনার অধীনে, বেসরকারি ঠিকাদাররা সুরক্ষিত স্থানে সরবরাহ পৌঁছে দেবে এবং বেসামরিক দলগুলো বিতরণের কাজ করবে।

তবে জাতিসংঘ এই উদ্যোগে অংশ নিতে রাজি নয়। গুতেরেস বলেছেন, ‘জাতিসংঘ এমন কোনো প্রকল্পে অংশ নেবে না, যা আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবিক নীতিগুলো মেনে চলে না।’

জাতিসংঘের মতে, তাদের কাছে ত্রাণ বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে। তাদের কাছে প্রায় ৯ হাজার ট্রাক ভর্তি করার মতো ১ লাখ ৬০ হাজার প্যালেট ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে।

গুতেরেস বলেন, ‘আমি গাজার দুর্গত মানুষের জন্য জীবন রক্ষাকারী সহায়তা চেয়েছি। আসুন, আমরা সঠিক কাজটি করি এবং দ্রুত করি।’

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *