গাজা অভিমুখে যাত্রা করা একটি নৌবহরের কর্মীদের আটকের পর তাদের সঙ্গে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। আটক হওয়া কর্মীদের অনেকেই দেশে ফিরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা রক্ষীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন, যদিও ইসরায়েল তা অস্বীকার করেছে।
**নৌবহরের গন্তব্য ও আটকের ঘটনা**
প্রায় ৪২টি নৌযানে করে গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লটিলা’। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় অবরোধ ভেঙে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য ছিল তাদের। ইসরায়েলি বাহিনী এই নৌবহরটি আটকে দেয় এবং প্রায় ৪৫০ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
এদের মধ্যে অনেকেই এখনো ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
**অভিযোগ ও পাল্টা জবাব**
আটক হওয়া ইতালীয় সাংবাদিক সাভেরিও তোমাসি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা তাদের ওষুধ সরবরাহ করেনি এবং বন্দীদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করেছে। তিনি আরও জানান, আটককৃতদের মধ্যে ছিলেন পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।
আটক হওয়ার পর ইসরায়েলি সেনারা তাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে অপমান করেছে। তোমাসি বলেন, “আমরা গ্রেটা থুনবার্গকে বন্দরে দেখেছি, তার হাত বাঁধা ছিল এবং তার পাশে ইসরায়েলের পতাকা ছিল, যা ছিল নিছক উপহাস।
তবে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, আটককৃতদের স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং যারা এখনো আটক আছেন, তারা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফিরতে চান।
আরেক ইতালীয় সাংবাদিক লরেঞ্জো ডি’অ্যাগোস্টিনো জানিয়েছেন, কারাগারে থাকাকালীন তাকে অনেকবার ঘুম থেকে জাগানো হয়েছে। এছাড়া, কুকুর দিয়ে ভয় দেখানো এবং বন্দুকের নলের লেজার লাইট দিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগও করেছেন তিনি।
ডি’অ্যাগোস্টিনো আরও জানান, ইসরায়েলিরা তার জিনিসপত্র ও টাকা চুরি করেছে।
আটক হওয়া কর্মীদের মধ্যে পাওলো দে মন্টিস জানিয়েছেন, তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটি প্রিজন ভ্যানে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, “নিরন্তর মানসিক চাপ ও অপমান ছিল।
তাদের দিকে সরাসরি তাকাতে দেওয়া হতো না, সবসময় মাথা নিচু করে রাখতে হতো। যখনই আমি তাদের দিকে তাকাতে গিয়েছি, তখনই একজন এসে আমাকে ঝাঁকি মেরে আমার মাথার পেছনে চড় মেরেছে। তারা আমাদের চার ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেছিল।”
**উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া**
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেছেন, তিনি কেটজিওত কারাগারে কর্মীদের আচরণে গর্বিত। তিনি আরও বলেন, “যারা সন্ত্রাসবাদের সমর্থক, তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের মতোই আচরণ করা হয়।
যদি কেউ এখানে এসে লাল গালিচা ও জয়ধ্বনি আশা করে, তবে তারা ভুল করেছে। তাদের কেটজিওত কারাগারের পরিবেশ ভালোভাবে অনুভব করা উচিত এবং ভবিষ্যতে ইসরায়েলে আসার আগে দুবার ভাবা উচিত।”
গ্রেপ্তারের ঘটনায় তুরস্ক, কলম্বিয়া, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ নিন্দা জানিয়েছে। গ্রিস ইসরায়েলের কাছে লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছে, তাদের নাগরিকদের সঙ্গে ‘অগ্রহণযোগ্য ও অনুপযুক্ত’ আচরণের জন্য।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস