গাজায় শিশুদের কান্না: খাবার নেই, গভীর রাতেও ঘুম নেই মা-বাবার!

গাজায় খাদ্য সংকট, বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলা, নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা প্রধান নিয়োগ বাতিল।

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত যেন থামছেই না। একদিকে গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র হচ্ছে, অন্যদিকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও, ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান হিসেবে একজন প্রাক্তন নৌ-কমান্ডারের নিয়োগ বাতিল করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

মঙ্গলবার ভোরে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে একটি ভবনে হামলা চালায়। এই হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে যে, তারা হিজবুল্লাহর একজন সদস্যকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে। গত নভেম্বরে ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর এই প্রথম ইসরায়েল বৈরুতে হামলা চালাল। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবারকের বিমান হামলায় আরও সাতজন আহত হয়েছে।

অন্যদিকে, গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রুটি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেকারিগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসের সঙ্গে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় যে পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছিল, তা সেখানকার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের দীর্ঘ সময়ের জন্য যথেষ্ট ছিল।

তবে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজায় খাদ্য ফুরিয়ে আসছে। সেখানকার বাজারগুলো প্রায় খালি হয়ে গেছে। মার্চ মাসের শুরুতে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বসবাসকারী মোহাম্মদ আল-কুরদ নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তার ১২ জন সন্তান রাতে খাবার ছাড়াই ঘুমোতে যায়। তিনি বলেন, “আমরা তাদের বলি, ধৈর্য ধরো, সকালে আমরা ময়দা আনব। আমরা তাদের এবং নিজেদের সঙ্গে মিথ্যা বলি।” সুলাইমান হাসানাত নামের আরেক ব্যক্তি জানান, তার পরিবার রুটির জন্য সারাদিন খোঁজাখুঁজি করেও ব্যর্থ হয়।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme – WFP) জানিয়েছে, গাজায় তাদের খাদ্য সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা সেখানকার বেকারিগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘের এই সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের কাছে এখন আর কোনো খাদ্য মজুত নেই। গাজায় প্রায় দুই মিলিয়ন ফিলিস্তিনির জন্য গত চার সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও অন্যান্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। হামাসের সঙ্গে ১৭ মাস ধরে চলা যুদ্ধের এটি সবচেয়ে দীর্ঘ অবরোধ।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান হিসেবে একজন প্রাক্তন নৌ-কমান্ডারকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন। এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা হওয়ায় তিনি তা প্রত্যাহার করে নেন।

এছাড়াও, মঙ্গলবার সকালে গাজা থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি জঙ্গিরা বেশ কয়েকটি রকেট নিক্ষেপ করেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে। এতে ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *