গাজায় খাবার বিক্রি: ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহত, বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়!

গাজায় খাদ্য সংকট: ক্ষুধার জ্বালায় কাতরাচ্ছে ফিলিস্তিনের মানুষ।

গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় খাদ্য সংকটে পড়েছে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ। খাবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গাজায় খাদ্য বিক্রি বা পরিবেশন করাও এখন জীবনের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত ২৭শে এপ্রিল, দেইর আল-বালাহ্ এলাকায় সবজির দোকান লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে নিহত হন এক সবজি বিক্রেতা।

নিহত ব্যক্তি পেশায় আইনজীবী ছিলেন, তবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জীবন ধারণের তাগিদে তিনি সবজি বিক্রি শুরু করেন। যুদ্ধের কারণে সেখানকার খাদ্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া।

খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল ধ্বংস করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৯টির বেশি খাদ্য ও বিতরণ কেন্দ্র এবং ২৯টি কমিউনিটি রান্নাঘরকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।

খাদ্যের অভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, ২১শে মে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় অন্তত ২৬ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে ৯ জন শিশু, অপুষ্টি ও চিকিৎসা সেবার অভাবে মারা গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া অবরোধের কারণে অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৫৭ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বর্তমানে গাজায় খাদ্য পাওয়া গেলেও তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। যাদের খাবার কেনার সামর্থ্য আছে, তারাও প্রয়োজনীয় খাদ্য পাচ্ছে না।

অনেক পরিবার দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছে।

এদিকে, ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস খাদ্য সহায়তা নিচ্ছে বলেই তারা গাজায় সাহায্য পাঠাতে বাধা দিচ্ছে।

তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা একটি যুদ্ধাপরাধ।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার কথা বলেছেন, যা যুদ্ধের আসল উদ্দেশ্যকে আরও একবার স্পষ্ট করে তোলে।

যদিও ইসরায়েল কিছু ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। প্রতিদিন অন্তত ৫০০ ট্রাক খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন, যেখানে বর্তমানে নিয়মিতভাবে সেই পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কিছু পশ্চিমা দেশ সামান্য কিছু প্রতীকী পদক্ষেপ নিলেও, তা পর্যাপ্ত নয়।

গাজার মানুষের এই করুণ দশার অবসান ঘটাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *