গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু হওয়ার পর সেখানকার জিম্মিদের পরিবারের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের আশঙ্কা, প্রিয়জনদের আর কখনোই হয়তো তারা ফিরে পাবেন না।
প্রায় দুই মাস আগে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর এই অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
জানা গেছে, হামাসের হাতে বন্দী থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো প্রায় ৬০ জন ব্যক্তির পরিবার তাদের মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে দুই ডজনের মতো জিম্মি এখনো জীবিত আছেন।
গত জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে হামাস ২৫ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। এর বিনিময়ে ফিলিস্তিনের প্রায় ২ হাজার বন্দীকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল।
কিন্তু এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা ভেঙে যাওয়ায় ইসরায়েল গাজায় বোমা হামলা শুরু করে। এতে জিম্মিদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল। এতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫০ জনের বেশি মানুষকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এই হামলায় বন্দী হওয়া এক সৈন্যের মা হেরুত নিমরোদি বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম, যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে হয়তো দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছানো যাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমার সব আশা ভেঙে গেছে।”
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি গাজায় বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ, ২০২৫) ভোরে চালানো এই হামলায় ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজারের বেশি।
অন্যদিকে, হামাস নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের জন্য দায়ী করে জিম্মিদের “অজানা ভাগ্যের” দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ করেছে। জিম্মিদের পরিবারগুলো ইসরায়েলের পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভ করার জন্য তাদের সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বন্দী তাল হাইমির চাচাতো ভাই উদি গোরেন বলেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। জিম্মিরা সেখানে বন্দী জীবন যাপন করছে, তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবিলম্বে হামাস, ইসরায়েল এবং মধ্যস্থতাকারীদের (যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতার) ওপর চাপ সৃষ্টি করে যুদ্ধ বন্ধ করা।”
যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে মুক্তি পাওয়া এক জিম্মি রোমি গোনেন বলেন, “আমি কখনো ভুলতে পারব না, যখন আগের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর বোমার শব্দ শুনেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল আর কখনোই মুক্তি পাব না।”
অন্য এক জিম্মির মা সিলভিয়া কুনো ইসরায়েলের নেতাদের ‘হৃদয়হীন’ বলে অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, “যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আমি দ্রুত আমার সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে চাই। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে মারতে চান, তবে এখনই মারুক, কারণ আমি আর এটা সহ্য করতে পারছি না।”
হেরুত নিমরোদি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ইসরায়েলের এই বিমান হামলা শুধু তার ছেলের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে না, বরং তাদের জীবনযাত্রার মান আরও খারাপ করে দেবে।
তিনি তার ছেলেকে স্মরণ করে বলেন, “দয়া করে, শক্ত থেকো, বেঁচে থাকার চেষ্টা করো। তাহলে হয়তো আমরা আবার মিলিত হতে পারব।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস