গাজায় ত্রাণকর্মীদের বহনকারী একটি গাড়িতে হামলার ঘটনায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই হামলার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে একটি মার্কিন-ইসরায়েল সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা।
বুধবার রাতের এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। তবে হামাস এখনো পর্যন্ত এই অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি।
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের এই বিতর্কিত সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের দলের অন্তত ২৫ জন সদস্যকে বহনকারী একটি বাসের ওপর খান ইউনিসের পশ্চিমাঞ্চলে হামলা চালানো হয়।
জিএইচএফ এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা এখনো ঘটনাগুলো জানার চেষ্টা করছি, তবে যা জানতে পেরেছি তা খুবই ভয়াবহ। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন।
আমাদের দলের কয়েকজন সদস্যকে জিম্মি করা হয়েছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
সংস্থাটি আরও জানায়, তারা খান ইউনিসের পশ্চিমে একটি বিতরণ কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিল। হামলার বিস্তারিত তথ্য জানার পর তা জানানো হবে।
জিএইচএফ এই “জঘন্য ও পরিকল্পিত” হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একইসাথে, হামাসের বিরুদ্ধে তাদের কর্মীদের সম্প্রতি হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ করেছে তারা।
এদিকে, গত রবিবার হামাসের গণমাধ্যম জানায়, তাদের বাহিনী “শত্রুদের পরিকল্পনা এবং আমাদের জনগণের ঐতিহ্য লঙ্ঘনকারী কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখে।”
হামাস আরও জানায়, “সকল এজেন্ট, চোর এবং সশস্ত্র অপরাধী দল প্রতিরোধের জন্য বৈধ লক্ষ্য।”
উল্লেখ্য, গাজায় ত্রাণ সহায়তা বিতরণের ক্ষেত্রে হামাস অর্থ আত্মসাৎ করছে—এমন অভিযোগের ভিত্তিতে জিএইচএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সংস্থাটি বিতর্কিত এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা এর সমালোচনা করে আসছে।
জাতিসংঘসহ অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলোর মতে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত নাজুক। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিধিনিষেধ, বিমান হামলা, নিরাপত্তা সংকট এবং হাজার হাজার মানুষের বাস্তুচ্যুতি—এসব কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
সাহায্য সরবরাহ সীমিত এবং যা আসছে, তারও একটা অংশ লুট হয়ে যাচ্ছে।
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ত্রাণ বিতরণের স্থানে গুলিতে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বুধবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানায়, তারা “গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংগ্রহের সময় মানুষ নিহত ও আহত হওয়ার খবর নিয়মিত পাচ্ছে।”
তবে, কোনো নির্দিষ্ট স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
ওসিএইচএ আরও জানায়, “আমরা আবারও জোর দিয়ে বলছি, কোনো মানুষকে যেন সাহায্যের জন্য জীবন বিপন্ন করতে বাধ্য করা না হয়। কারণ, গাজাজুড়ে মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।”
অন্যদিকে, গাজায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নেটব্লকস নামক একটি ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, গাজা শহরের উত্তরাঞ্চলে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই ব্ল্যাকআউট চলছে, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দীর্ঘতম।
এর ফলে ঘটনার প্রত্যক্ষ চিত্র পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই ব্ল্যাকআউটের কারণে মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং তার ও তারবিহীন ডেটা সংযোগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেরুজালেমে থাকা সিএনএন-এর প্রতিনিধি দল বুধবার থেকে গাজার কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানায়, “টেলিযোগাযোগ পরিষেবা, ইন্টারনেট সংযোগ এবং জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থার এই সংকট আবারও একটি বাস্তব হুমকি তৈরি করেছে।
এর ফলে জীবন রক্ষাকারী সমন্বয় ব্যাহত হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে বঞ্চিত হবে।” বৃহস্পতিবার গাজার কেন্দ্র ও দক্ষিণাঞ্চলে এই ধরনের বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে।
নেটব্লকস তাদের আপডেটে জানিয়েছে, “গাজা উপত্যকায় ইন্টারনেট সংযোগে আরও ব্যাঘাত ঘটছে। টেলিযোগাযোগের এই সমস্যা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে প্রভাব ফেলবে।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন