গাজায় ইসরায়েলি হামলায় শিশুদের আর্তনাদ, রক্তের হোলি!

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে চালানো প্রায় ১০০টি হামলায় কমপক্ষে ৪৩৬ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১৮৩ জন শিশু, ৯৪ জন নারী এবং ৩৪ জন বৃদ্ধ রয়েছেন।

এই হামলায় আহত হয়েছেন ৬৭৮ জনের বেশি, যাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আল জাজিরার অনুসন্ধানী সংস্থা সানাদ মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চালানো ২৩টি হামলার স্থান চিহ্নিত করেছে। হামলায় গাজার উত্তরে জাবালিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণে খান ইউনিস পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মানবিক করিডোর হিসেবে চিহ্নিত আল-মাওয়াসি এলাকাও বাদ যায়নি ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে।

গাজা শহরের পশ্চিমাঞ্চলে আল-রান্তিসি শিশু হাসপাতালের সামনে সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলা চালানো হয়, যেখানে বিশেষভাবে সক্ষম একজন নারীও ছিলেন। এছাড়াও, উদ্বাস্তু পরিবারদের আশ্রয় দেওয়া দুটি স্কুল, গাজা শহরের দারাজের আল-তাবিন স্কুল এবং রাফাহ শহরের উত্তর-পশ্চিমে দার আল-ফাদিলা স্কুলেও বোমা হামলা চালানো হয়েছে, যাতে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি দেইর আল-বালাহ থেকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের অবরোধ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে গাজাবাসী বর্তমানে আতঙ্কিত, অসহায় এবং বিপর্যস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

খাদ্যের অভাবে মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এবং পানি শোধনাগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫ লাখ ফিলিস্তিনি জলকষ্টে ভুগছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় বোমা হামলা ‘কেবল শুরু’ এবং হামাসকে ধ্বংস ও জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য ইসরায়েল তার যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

ইতিমধ্যেই অনেক পরিবার সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। রামী আবদুর বোন নেরিনের পরিবারও নিহতদের মধ্যে রয়েছে, যাদের গাজা শহরে ভোর ৪:৩০ মিনিটে বোমা মেরে হত্যা করা হয়।

রামী আবদু ইউরোপ-ভূমধ্যসাগরীয় মানবাধিকার পর্যবেক্ষকের চেয়ারম্যান। নেরিন, তার সন্তান ওবাইদা, ওমর, লায়ান এবং ওবাইদার স্ত্রী মালাক ও তাদের শিশু সন্তান সিওয়ার ও মোহাম্মদ নিহতদের মধ্যে ছিল।

অক্টোবর মাস পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৯0২টি পরিবারের সবাই নিহত হয়েছে, যা সরকারি নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, ১,৩৬৪টি পরিবারে এখন কেবল একজন সদস্য জীবিত আছে, এবং ৩,৪৭২টি পরিবারে মাত্র দুজন সদস্য বেঁচে আছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯,৫৪7 জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং ১,১২,৭১৯ জন আহত হয়েছে।

ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ পর্যন্ত সরকারি মিডিয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কয়েক হাজার ফিলিস্তিনির মরদেহ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *