গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নারী ও শিশুসহ নিহত অন্তত ১৬, খাদ্য সংকটে সহায়তা বন্ধ।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবারের (৯ মে) হামলায় দেইর আল-বালাহ, নুসেইরাত শরণার্থী শিবির, গাজা শহরের শুজাইয়া, বেইত লাহিয়া এবং খান ইউনিসে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
আল-জাজিরা আরবি সূত্রে জানা গেছে, পৃথক হামলায় দেইর আল-বালাহ ও নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে নিহত হয়েছে আরও তিনজন। এছাড়া, গাজা শহরের পূর্বে শুজাইয়াতে শেলিংয়ে এক ব্যক্তি নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, বেইত লাহিয়ার একটি বাড়িতে বোমা হামলায় ৫ জন নিহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া এক নারীর সন্ধানে উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন।
বেইত লাহিয়ার ওই বাড়িটিতে বাস্তুচ্যুত অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। হামলায় ওই বাড়ির মালিক এবং আশ্রয় নেওয়া সবাই নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খান ইউনিসে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য তৈরি তাঁবুতে ইসরায়েলি কামানের আঘাতে এক কিশোরী নিহত এবং আরও চারজন আহত হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের কারণে মানবিক সংকট আরও তীব্র হচ্ছে। খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি দুর্ভিক্ষের দিকে যাচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) জানিয়েছে, তাদের কাছে খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা রান্না বন্ধ করে দিয়েছে। ডব্লিউসিকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের জন্য খাবার এবং ৮০ হাজার রুটি তৈরি করত।
ডব্লিউসিকে-র প্রতিষ্ঠাতা জোস আন্দ্রেস বলেছেন, ‘মিশর, জর্ডান ও ইসরায়েলে আমাদের খাদ্য বোঝাই ট্রাক প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় সেগুলো যেতে পারছে না।
মানবিক সহায়তা অবশ্যই সেখানে পৌঁছাতে দিতে হবে।’ এর আগে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে জানিয়েছিল, গাজায় তাদের খাদ্য সরবরাহ প্রায় শেষ হয়ে গেছে।
অবরোধের কারণে সেখানকার মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে এবং অপুষ্টি ব্যাপক হারে বাড়ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এই অবরোধকে ‘অনাহার কৌশল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং এটিকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবেও উল্লেখ করেছে।
আমেরিকান নিয়ার ইস্ট রিফিউজি এইড-এর প্রেসিডেন্ট শন ক্যারল আল-জাজিরাকে বলেন, গাজার মানবিক সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ত্রাণ বিতরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সপ্তাহে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছিলাম, কিন্তু গত ৬৬ দিনে আমরা কয়েক হাজারের বেশি মানুষের কাছে খাবার সরবরাহ করতে পারিনি।
গাজায় সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সরকারগুলোকে মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আমরা এখানে আমাদের মনুষ্যত্ব হারাচ্ছি।’
গাজায় অবশিষ্ট কয়েকটি সাহায্য কেন্দ্রে খাদ্য বিতরণের সময় বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। খাদ্য সংগ্রহের জন্য নারী, শিশু ও পুরুষদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়।
রুটি তৈরির কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে এবং জ্বালানি সংকটের কারণে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
গাজার বাইরেও উত্তেজনা বাড়ছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরানকে হামাস ও হিজবুল্লাহর মতোই পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এর আগে, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা চালায়।
হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেছেন, ‘আমরা ইসরায়েলি শত্রুদের বিরুদ্ধে আরও সামরিক অভিযান চালাব।’
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা