গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সেখানকার হাসপাতালগুলোতে খাদ্য সংকটে ভুগছেন রোগীরা। খাবার সরবরাহ করতে না পারায় সংকটে পড়েছেন চিকিৎসকরা। রোগীদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা যাচ্ছে না, যার ফলে তাদের সুস্থ হতে সমস্যা হচ্ছে।
খবর অনুযায়ী, গত কয়েক মাস ধরে এই পরিস্থিতি চলছে।
খান ইউনিসের নাসির হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. খালেদ আলসের জানিয়েছেন, “প্রায় সকল আহত রোগীর ওজন কমে গেছে।” তিনি আরও জানান হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব রয়েছে।
খাবার সরবরাহ সীমিত হওয়ায় রোগীদের ভালো চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
খাদ্যের অভাবে গাজায় অপুষ্টি বাড়ছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত এক মাসে হাজার হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
এছাড়াও, প্রায় ১৬ হাজার গর্ভবতী নারী ও নতুন মা এই বছর অপুষ্টির শিকার হতে পারেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রোগীদের স্বজনদের বাইরে থেকে খাবার এনে দিতে হচ্ছে।
আসমা ফায়াজ নামের এক নারী তার অসুস্থ ছেলের জন্য বাজারে গিয়ে কিছু সবজি কিনেছিলেন।
সাধারণত, তিনি ছেলেকে ক্যানড খাবার বা টুনার ওপর নির্ভর করতে বলেন। কিন্তু সবজির দাম আকাশছোঁয়া, যা তার পক্ষে নিয়মিত কেনা সম্ভব নয়।
গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র হওয়ার কারণ হলো ইসরায়েলের অবরোধ।
মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধের কারণে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। দোকান ও বেকারিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, স্থানীয় বাজারের প্রায় সব দোকানেই এখন ক্যানড খাবার পাওয়া যাচ্ছে।
সবজির সরবরাহও কমে গেছে, কারণ ইসরায়েলি হামলায় ৮০ শতাংশের বেশি চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯ বছর বয়সী আসমা ফারাদের শরীরে একটি বোমা হামলায় স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে।
তার বোন সালওয়া ফারাদের ভাষ্যমতে, “আগে হাসপাতালে রোগীদের জন্য ফল নিয়ে যাওয়া হতো, এখন পানির বোতলই উপহার হিসেবে দিতে হয়।”
মোহাম্মদ আল-বুরশ তার ৩০ বছর বয়সী ছেলে সোবহির জন্য কিছু টুনার ক্যান ও শিমের বীজ নিয়ে গিয়েছিলেন।
সোবহি একটি বিমান হামলায় আহত হয়ে তার পায়ের একটি অংশ হারিয়েছেন এবং ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।
আল-বুরশ জানান, সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় ছেলেকে খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে।
ইসরায়েল বলছে, হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে এবং জিম্মিদের মুক্তি দিতে চাপ প্রয়োগ করার জন্য তারা অবরোধ আরোপ করেছে।
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই অবরোধ একটি যুদ্ধাপরাধের সামিল। তারা একে ‘ক্ষুধা কৌশল’ হিসেবেও অভিহিত করেছে।
বর্তমানে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ বিতরণের বিষয়টি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছে।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলো এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস