গাজায় ইসরায়েলের হামলা: নারী ও শিশুসহ নিহত ৮১, ফিরল যুদ্ধবিরতি?

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮১, যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ জনে। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।

গত বুধবারের এই হামলার পর উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করে গাজায় ‘শক্তিশালী হামলা’ চালানোর নির্দেশ দেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস জানায়, তারা একজন জিম্মির মরদেহ হস্তান্তরে বিলম্ব করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

তিনি বলেন, গাজার রাফাহ শহরে হামাসের হামলায় এক ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হওয়ার পরেই ইসরায়েল এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।

যদিও হামাস ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙার জন্য অভিযুক্ত করেছে।

গাজার হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৫ জনের মধ্যে ২০ জন শিশু গুরুতর অবস্থায় রয়েছে।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ এসেছে, যাদের মধ্যে সাতজন নারী এবং ছয়জন শিশু।

এর আগে অন্তত ৬০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত দেইর আল-বালাহ-র আল-আকসা হাসপাতালে অন্তত ১০ জনের মরদেহ পৌঁছেছে।

এদের মধ্যে তিনজন নারী ও ছয়জন শিশু রয়েছে।

এছাড়া, খান ইউনিসে অবস্থিত নাসের হাসপাতালে পাঁচ দফা হামলায় নিহত ২০ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে ১৩ জন শিশু এবং দুইজন নারী।

আল-আওদা হাসপাতালে পৌঁছেছে ১৪ জন শিশুসহ ৩০ জনের মরদেহ।

গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, গাজার দক্ষিণে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।

এর পরই নেতানিয়াহু এই হামলার নির্দেশ দেন।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, হামাস জিম্মিদের দেহের কিছু অংশ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি সাজানো নাটক ছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ইসরায়েল হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে বিষয়টি জানিয়েছিল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা সন্ত্রাসী সংগঠনের কমান্ডারদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

তবে তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলার কথা জানালেও, কোনো ধরনের লঙ্ঘনের সমুচিত জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েলের সৈন্যদের উপর হামলা হলে তাদের পাল্টা জবাব দেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, হামাস মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য একটি ক্ষুদ্র অংশ এবং তাদের ভালো ব্যবহার করতে হবে।

অন্যথায় তাদের ‘ধ্বংস’ করা হবে।

একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাফায় ‘শত্রুপক্ষের হামলায়’ ওই সৈন্য নিহত হয়।

হামাস জানায়, রাফায় হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

তারা মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি ইসরায়েলকে এই হামলা বন্ধ করতে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

গাজার হাসপাতালগুলোতে আহতদের জায়গা দিতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে।

অ্যাম্বুলেন্স এবং ছোট ট্রাকে করে মৃতদেহগুলো হাসপাতালে আনা হচ্ছে।

দেইর আল-বালাহ-তে স্ট্রেচারে করে এবং অনেকে কাঁধে করে মরদেহ নিয়ে আসছেন।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী নারী জানিয়েছেন, “তারা আমাদের খুব কাছে আঘাত হেনেছে।

আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিলাম, আমাদের শিশুদেরও একই অবস্থা।”

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *