গাজায় বোমা, নারী ও শিশুসহ ৪৫ জনের মৃত্যু: ত্রাণ সংকটে হাহাকার!

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শিশুও। একদিকে যখন মানবিক সহায়তা পৌঁছানো নিয়ে চরম জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তখন এই হামলাগুলো নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

বুধবার পাওয়া খবর অনুযায়ী, গভীর রাতে চালানো বোমা হামলায় নিহতদের মধ্যে নারী ও এক সপ্তাহের শিশুও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও গাজায় ইসরায়েলি অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার কিছু মানবিক সহায়তা সামগ্রী নিয়ে কয়েকটি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও, সেগুলো এখনো পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন, সহায়তাগুলো গাজায় প্রবেশ করলেও, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বাধার কারণে ত্রাণকর্মীরা সেগুলো বিতরণের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যেতে পারেননি।

সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) হাতে আসা অভ্যন্তরীণ নথিতে দেখা যায়, কেরেম শালোম সীমান্ত ক্রসিং থেকে কোনো ত্রাণবাহী ট্রাক বের হয়নি। যদিও ইসরায়েলি দিক থেকে ৬৫টি ট্রাক ফিলিস্তিনি অংশে প্রবেশ করেছে, তবে সেগুলো গাজার ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি।

গাজায় মানবিক সহায়তা বিষয়ক ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, বুধবার সকালে কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে সেগুলো বিতরণের জন্য যেতে পেরেছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা জানিয়েছে, তারা সীমান্ত ক্রসিং থেকে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেন, কিন্তু মঙ্গলবার তা সম্ভব হয়নি।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে। এর আগে, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ফ্রান্স ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান, কাজা ক্যালাস জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়টি বিবেচনা করে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনা করছেন।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামাস আত্মসমর্পণ করলে অথবা তাদের সশস্ত্র সদস্যদের বিতাড়িত করা গেলে তারা যুদ্ধ বন্ধ করতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধ বন্ধ করা হলে তারা জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত।

তবে সশস্ত্র সদস্যদের বিতাড়িত করার শর্ত তারা মানতে নারাজ।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনা থেকে ইসরায়েল তাদের প্রধান আলোচক দলকে সরিয়ে নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, সেখানে তারা নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে।

এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। খান ইউনিসে, যেখানে ইসরায়েল নতুন করে সেনা অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে হামলায় একই পরিবারের ১৪ জনসহ ২৪ জন নিহত হয়েছে।

এছাড়া, মধ্য গাজায় এক সপ্তাহের এক শিশুও নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এসব হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তাদের দাবি, তারা হামাসের অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে এবং বেসামরিক এলাকা থেকে হামাস সদস্যরা কাজ করছে।

উল্লেখ্য, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হওয়ার পর গাজায় এই যুদ্ধ শুরু হয়। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক।

হামাসের হাতে এখনো ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় এ পর্যন্ত ৫৩,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

তবে এই সংখ্যায় হতাহত বেসামরিক নাগরিক এবং যোদ্ধা– কাউকেই আলাদা করা হয়নি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *