গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত ৫১, ত্রাণ সংকটে হাহাকার!

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, ত্রাণ সরবরাহ সীমিত।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার পর থেকে চালানো হামলায় অন্তত ৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে গাজা সিটি ও উত্তর এলাকার ২৫ জন রয়েছেন।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-বারাকাতে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে চালানো হামলায় একই পরিবারের ৯ জনসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, গাজার উত্তর-পশ্চিমের আস-সাফতাওয়ি এলাকায় বখিত পরিবারের বাড়িতে হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ৫ জন।

এদিকে, গাজার উত্তরাংশে অবস্থিত আল-আওদা হাসপাতালের ভেতরে একটি ঔষধের গুদামে ট্যাংক শেল আঘাত হানলে আগুন ধরে যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উদ্ধারকর্মীরা কয়েক ঘণ্টা ধরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। হাসপাতালের বাইরে ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে, যার ফলে হাসপাতালে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতেও কিছু ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল কিছু পরিমাণে পণ্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পর থেকে প্রায় ৯০টি ট্রাকে করে মানবিক সহায়তা পাঠানো হয়েছে।

এই সহায়তা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ওষুধ, গমের আটা এবং পুষ্টিকর খাবার।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওচা’র মুখপাত্র জেনস লারকে জানিয়েছেন, ত্রাণ বিতরণে নিরাপত্তা সংকট, লুটপাটের ঝুঁকি এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে সমস্যা হচ্ছে। গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর জন্য ৮৭টি ত্রাণ ট্রাক বরাদ্দ করা হয়েছে, যা জরুরি মানবিক চাহিদা মেটাবে।

আল-জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজ্জুম দেইর আল-বালাহ থেকে জানিয়েছেন, বুধবার খাদ্য বোঝাই ট্রাকগুলো জাতিসংঘের বিতরণ কেন্দ্রে পৌঁছেছে এবং খাদ্য সরবরাহ সফলভাবে খালাস করা হয়েছে। গাজার মিডিয়া অফিসের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, কিছু বেকারি পুনরায় তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

তবে, এই সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। বিশেষ করে গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনো খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো যায়নি, যেখানে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেখানে দুর্ভিক্ষ আসন্ন।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল যেন গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৫০০ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেয়। একইসঙ্গে, লুটপাটের আশঙ্কা ও ইসরায়েলি সামরিক বিধিনিষেধের কারণে ত্রাণ বিতরণে বিলম্ব হচ্ছে।

এদিকে, পোপ ফ্রান্সিস গাজার পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক ও বেদনাদায়ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, গাজায় একটি নতুন সহায়তা ব্যবস্থা চালু করতে তারা কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করবেন। এছাড়া, হামাস মুক্ত একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের, যেখানে বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি হামলা পুনরায় শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩,৫০৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, গত অক্টোবর মাস থেকে ইসরায়েলের আক্রমণের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৫৩,৬৫৫ জন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *