গাজায় ত্রাণকর্মীদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ঘটনা, নিহত ১৫।
গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে ত্রাণকর্মীদের বহনকারী একটি বহরের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর (আইডিএফ) হামলার ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সিভিল ডিফেন্স এবং জাতিসংঘের ত্রাণকর্মী ছিলেন।
হামলার শিকার হওয়া অ্যাম্বুলেন্স ও ত্রাণকর্মীদের ওপর সরাসরি গুলি চালানো হয় এবং পরে বুলডোজার দিয়ে তাদের মরদেহসহ গাড়ীগুলো মাটি চাপা দেওয়া হয়। নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, গত ২৩শে মার্চ রাতে রাফাহ শহরের কাছে একটি জরুরি উদ্ধারকারী দল নিখোঁজ অ্যাম্বুলেন্স ক্রু’দের খুঁজতে যায়। এরই মধ্যে, ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্যারামেডিক মোহাম্মদ আল-হিলা তার বাবাকে ফোন করে জানান, “বাবা, জলদি আসো, ইসরায়েলিরা আমাদের ওপর হামলা করেছে এবং সরাসরি গুলি চালাচ্ছে।”
এরপরই ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরে, স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, সেখানে ১৫ জন ত্রাণকর্মীর মরদেহ পাওয়া গেছে। তাদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য জরুরি উদ্ধারকারী যানগুলোও ধ্বংস করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আটজন, সিভিল ডিফেন্সের ছয়জন এবং জাতিসংঘের একজন কর্মী ছিলেন।
ইসরায়েলি বাহিনী প্রথমে দাবি করেছিল, তাদের সেনারা সন্দেহজনক কিছু যান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল, জরুরি সাহায্যকর্মীরা জঙ্গি হতে পারে।
তবে, পরবর্তীতে তারা জানায়, হামলায় নিহতদের মধ্যে হামাস সদস্য ছিল। কিন্তু নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
তাদের মতে, নিহতরা সবাই সাধারণ ত্রাণকর্মী ছিলেন।
এই ঘটনার প্রমাণ হিসেবে সিএনএন একটি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পতাকা লাগানো অ্যাম্বুলেন্সগুলো রাস্তায় চলছে এবং তাদের জরুরি আলো জ্বলছে।
হামলার আগে ধারণ করা ভিডিওতে শোনা যায়, একজন প্যারামেডিক শাহাদা পাঠ করছেন এবং বলছেন, “মা, আমাকে ক্ষমা করো, আমি তো মানুষের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার পর ইসরায়েলি সেনারা আহতদের আটক করে এবং তাদের মারধর করে। পরে বুলডোজার দিয়ে মরদেহ ও অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএন ওচা’র প্রধান জোনাথন হুইটল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তাদের (নিহতদের) ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে, তারা জীবন বাঁচাতে প্রস্তুত ছিলেন, অথচ তাদের একটি গণকবরে সমাধিস্থ করা হলো।”
ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এরই মধ্যে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘটনার পুনঃতদন্ত শুরু করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন