গাজায় ইসরাইলি বোমা: আবাসিক এলাকায় হামলায় নিহত ৩৫!

গাজায় আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৫, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা।

গাজা শহরের শ focusজেয়া নামক আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও বহু মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া আরও অনেকের মরদেহ উদ্ধারের পর মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

বুধবারের ওই হামলায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের নিশানায় ছিলেন হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় যোদ্ধা।

তবে তারা ঐ যোদ্ধার নাম প্রকাশ করেনি।

ইসরায়েলি বাহিনী আরও দাবি করেছে, বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির পরিমাণ কমাতে তারা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিল।

শ focusজেয়ার বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সী আইয়ুব সালিম আল জাজিরাকে জানান, হামলায় নিহতদের শরীর “টুকরো টুকরো” হয়ে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, “গোটা এলাকা ধুলোয় ঢেকে গিয়েছিল।

সেখানে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর মানুষের আর্তচিৎকার শোনা যাচ্ছিল।

ঘটনা স্থল থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি ইব্রাহিম আল খলিলি জানান, উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারাও এতে সাহায্য করছেন।

তিনি আরও জানান, বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা অনেক মানুষ এই ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে উদ্ধারকারীদের কাছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই।

ফলে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে, গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, আহত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ ও সরঞ্জাম এর অভাব রয়েছে।

বিশেষ করে পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং রক্তের সরবরাহ জরুরি।

অন্যদিকে ধ্বংসস্তূপের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আহতদের কাছে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।

গত ১৮ মার্চ হামাসের সঙ্গে প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে গাজায় আবার বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

এরপর তারা গাজার অভ্যন্তরে স্থল অভিযানও জোরদার করে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার চেষ্টা চললেও এখন পর্যন্ত কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র অ্যাভিচাই আদ্রাঈ জানান, শ focusজেয়াতে তাদের সর্বশেষ অভিযানে “বন্দুকধারীদের” নির্মূল করা হয়েছে এবং অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে।

এছাড়া রাফায় তারা টানেলের প্রবেশপথ ও অবকাঠামোও ধ্বংস করেছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার কারণে সেখানে খাদ্য সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র এবং উদ্বাস্তু শিবিরগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বুধবার গাজার বিভিন্ন স্থানে চালানো হামলায় অন্তত আরও ১০ জন নিহত হয়েছে।

সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে।

হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে আমাদের জনগণের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য লজ্জাজনক।”

তারা আরব ও মুসলিম দেশগুলোর “ভীরু” ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে।

আল জাজিরার রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা এই হামলাকে “বর্বর” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, “যেভাবে এই হামলাগুলো চালানো হচ্ছে, তা থেকে বোঝা যায় ইসরায়েল গাজাকে জাতিগতভাবে নির্মূল করতে চায়।”

মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে ইসরায়েল গাজার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলছে, যা তারা “নিরাপত্তা অঞ্চল” হিসেবে বর্ণনা করছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে ওই এলাকা জনশূন্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালালে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে।

আল জাজিরার হিসাব অনুযায়ী, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,১৩৯ জন নিহত হয়েছিল এবং প্রায় ২৫০ জনকে বন্দী করা হয়েছিল।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৫০,৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *