গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, হামাসের দ্বিধাগ্রস্ত প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, প্রতিদিনই বাড়ছে স্বজন হারানোর বেদনা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত রাতে চালানো হামলায় অন্তত ১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে যখন এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, তখন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা। তবে হামাস এখনো পর্যন্ত এই প্রস্তাবের বিষয়ে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।
প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসকে গাজায় ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, সকল জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে এবং অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেবে এবং যুদ্ধ বন্ধ হবে।
তবে এই শান্তি প্রস্তাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। আন্তর্জাতিক মহলে এই প্রস্তাবের সমর্থন দেখা গেলেও, হামাস নেতারা এর কিছু শর্তের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন।
গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের পূর্বাঞ্চলে একটি বাড়িতে বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন নয়জন, যাদের অধিকাংশই নারী। এছাড়া, একই শহরে একটি তাঁবুতে হামলায় নিহত হয়েছেন আরও তিনজন।
গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে একজন নিহত ব্যক্তির লাশ আনা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, সেখানে পৌঁছাতে তাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রতীকী সহায়তা নিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি বহরকে বৃহস্পতিবার সকালে ইসরায়েল বাধা দিয়েছে। বহরে থাকা প্রায় ৪০টি নৌযানের বেশিরভাগই তারা আটক করেছে।
এই বহরে কয়েকজন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যও ছিলেন। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আটককৃতদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে হওয়া চুক্তির কিছু বিষয় তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যান্য ফিলিস্তিনি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তবেই তারা তাদের চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও জানান, হামাস কাতার ও মিশরের মাধ্যমে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। এই দুটি দেশ শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন জানালেও, তাদের কিছু বিষয়ে আপত্তি রয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়, যাতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর মধ্যে আগের কয়েকটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে অধিকাংশ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হলেও, এখনো প্রায় ৪৮ জন গাজায় বন্দী রয়েছে।
ইসরায়েল ধারণা করছে, তাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত আছেন।
প্রস্তাবে গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর এবং পুনর্গঠন কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, এই অঞ্চলের দুই মিলিয়নের বেশি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার কথাও বলা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৬৬,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১,৭০,০০০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞরা এই পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন।
গত এক মাসে ইসরায়েলের বড় ধরনের অভিযানের কারণে প্রায় ৪,০০,০০০ ফিলিস্তিনি গাজা শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে উত্তর গাজায় ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে এবং মানুষজন দক্ষিণ দিকে, অর্থাৎ একমাত্র নিরাপদ পথের দিকে ছুটছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গাজা শহর থেকে অবশিষ্ট ফিলিস্তিনিদের অবিলম্বে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা শহর ছাড়বে না, তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য করা হবে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যদিও হামাসের সামরিক সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, তারা এখনো মাঝে মাঝে হামলা চালাচ্ছে। বুধবার গাজা থেকে ইসরায়েলে অন্তত সাতটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়।
তবে সেগুলো হয় প্রতিহত করা হয়েছে, নয়তো খোলা স্থানে পড়েছে। এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।