গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৫২, ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে তীব্র সমালোচনা আন্তর্জাতিক মহলের
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়। আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫২ জন নিহত হয়েছেন। অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক মহল তীব্র সমালোচনা করছে।
খাদ্য সংকটের আশঙ্কার মধ্যে ত্রাণ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য তেল আবিবের উপর চাপ বাড়ছে।
গাজার বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে গাজা সিটি, নুসেইরাত ও মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, শুধুমাত্র গাজা সিটিতেই অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া নুসেইরাত ক্যাম্পে নিহত হয়েছেন দুইজন এবং মাগাজি ক্যাম্পে মারা গেছেন আরও দুইজন।
মঙ্গলবার ইসরায়েল কিছু সংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র জেন্স লায়েরকে জানান, কেরেম আবু সালেম ক্রসিং (ইসরায়েলিদের কাছে যা কেরেম শালোম নামে পরিচিত) হয়ে গাজার দিকে কোনো ত্রাণ ট্রাক আসেনি।
ইসরায়েল জানিয়েছে, ১১ সপ্তাহের অবরোধের পর তারা গাজায় ৯৩টি ত্রাণ ট্রাক প্রবেশ করতে দিয়েছে। তবে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আয্যুম জানান, ট্রাকগুলোর মধ্যে অধিকাংশের কেবল ফিলিস্তিনি অংশে প্রবেশের অনুমতি ছিল।
তিনি আরও বলেন, “এগুলো এখনো সীমান্ত ক্রসিংয়েই আটকা রয়েছে। মাত্র পাঁচটি ট্রাক ভেতরে প্রবেশ করতে পেরেছে।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দেওয়ার এটি আরও একটি উদাহরণ।”
চিকিৎসা সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)-এর খান ইউনিসের সমন্বয়কারী পাসকাল কোইসার্ড বলেন, “ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অবরোধের মাসগুলোতে গাজায় সামান্য কিছু ত্রাণ সরবরাহ করে সেখানকার বাসিন্দাদেরকে কার্যত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তারা দেখাতে চাইছে যেন অবরোধ তুলে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে গাজাবাসীর জীবনধারণ কঠিন করে তোলা হয়েছে।”
গাজায় মানবিক সহায়তা বিষয়ক ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা জানিয়েছে, বুধবার সকালে কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে সেগুলো গাজার ভেতরের দিকে বিতরণের জন্য যেতে পারবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এদিকে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন গাজার ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’ বিবেচনায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছে।
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘কঠোর পদক্ষেপের’ হুমকি দিয়েছে।
ভ্যাটিকান সিটি থেকে পোপ ফ্রান্সিসও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি আবারও মানবিক সহায়তা পাঠানোর এবং গাজায় চলমান সহিংসতা বন্ধের জন্য জোর আবেদন জানাচ্ছি। এই ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ।”
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বুধবার বিশ্ব নেতাদের প্রতি গাজার অবরোধ ভাঙার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি বিশ্ব নেতাদের প্রতি গাজায় আমাদের জনগণের উপর থেকে অবরোধ তুলে নিতে জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি অবিলম্বে ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা, ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করা, আটককৃতদের মুক্তি এবং গাজা থেকে পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
গত অক্টোবর মাস থেকে হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩,৫৭৩ জনে।
আহত হয়েছেন ১,২১,৬৮৮ জন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা