গাজায় হাসপাতালে ইসরায়েলি তাণ্ডব: কি ঘটছে?

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে অবরুদ্ধ দুটি হাসপাতাল, চিকিৎসা পরিষেবা চরম সংকটে।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যে সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গভীর সংকটে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলে বর্তমানে চালু থাকা হাসপাতালগুলোর মধ্যে দুটি, ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল এবং আল-আওদা হাসপাতালকে ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি সেনা সদস্যরা। হাসপাতাল দুটির কর্মী ও সাহায্য সংস্থাগুলোর মতে, এর ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগী বা চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশ করতে পারছে না, আবার সেখানকার কেউ বের হতেও পারছেন না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization – WHO) জানিয়েছে, গাজার হাসপাতালগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘের এই সংস্থাটি ইসরায়েলের সঙ্গে হামাস জঙ্গিদের ১৯ মাসের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর ওপর প্রায় ৭০০টি হামলার নথিভুক্ত করেছে।

উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালটি একসময় উত্তর গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ছিল। বর্তমানে ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতালটির প্রায় ৫০০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। রবিবার থেকে ড্রোনগুলি হাসপাতালের উপর উড়ছে এবং সেখানকার সব ধরনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। হাসপাতালের বাইরের দিকের একটি দেয়াল বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। মঙ্গলবার হাসপাতালের জেনারেটরে আঘাত হানে বিমান হামলা। এতে আগুন ধরে যায় এবং হাসপাতালের প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া, হাসপাতালের জল সরবরাহেরও ক্ষতি হয়েছে।

আল-আওদা হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য রামি শুরাফি জানিয়েছেন, সোমবার ইসরায়েলি ড্রোনগুলি হাসপাতালটির উঠানে গুলি চালিয়েছিল, যার ফলে সেখানে কারও নড়াচড়া করার উপায় ছিল না। মঙ্গলবার, ইসরায়েলি ড্রোন দুটি অ্যাম্বুলেন্সের উপর গুলি চালায়, যখন তারা গাজা সিটিতে তিনজন রোগীকে স্থানান্তরের চেষ্টা করছিল। পরে তাদের গাজার পশ্চিমাঞ্চলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

আল-আওদা হাসপাতালে বর্তমানে প্রায় ১৪০ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং ৪৭ জন রোগী রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন শিশু ও কয়েকজন গর্ভবতী নারী রয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, তারা এখনও হাসপাতাল খালি করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন, ওই অঞ্চলে এখনো বোমা হামলা চলছে এবং বহু আহত মানুষ রয়েছেন।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা অবশিষ্ট রোগীদের অন্যান্য হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, যারা এখনো হাসপাতালে রয়েছেন তাদের জরুরি ভিত্তিতে খাবার ও জলের প্রয়োজন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫৩,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হামাসের হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নাগরিক।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *