গাজায় মানবিক বিপর্যয়: অনাহার-মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফিলিস্তিনিরা, সাহায্য পাঠানোর পথ এখনও কঠিন।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান এবং অবরোধের কারণে সেখানকার ফিলিস্তিনিরা মারাত্মক খাদ্য সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একশটির বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে।
সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর পথ এখনো কঠিন হয়ে আছে।
বুধবার (প্রকাশের তারিখ অনুযায়ী) পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় একদিনে আরও ২১ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং বেসামরিক হতাহতের জন্য হামাসকে দায়ী করছে।
আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’, ‘মার্সি কর্পস’ এবং ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোসহ ১১৫টি সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, গাজায় তাদের কর্মীরা এবং সেখানকার সাধারণ মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
ইসরায়েলের বিধিনিষেধ এবং ত্রাণ বিতরণের সময় হামলার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে তারা মনে করে। জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যেই সাহায্যপ্রার্থীদের ওপর বহুবার গুলি চালিয়েছে, যাতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
সংস্থাগুলো ইসরায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছে, গাজার ওপর অবরোধ আরোপ করে এবং ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিয়ে তারা ‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, অনাহার এবং মৃত্যুর’ কারণ হচ্ছে।
যদিও ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, মে মাস থেকে তারা প্রায় ৪,৫০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করতে দিয়েছে। ইসরায়েল আরও জানায়, জাতিসংঘের মাধ্যমে এখনো ৭০০টির বেশি ট্রাক বিতরণের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে জাতিসংঘের মতে, দৈনিক গড়ে ৭০টির মতো ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে, যা যুদ্ধের আগের ছয় সপ্তাহের গড় হিসাবের চেয়ে অনেক কম।
ওই সময় প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় পৌঁছেছিল। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বিধিনিষেধ, চলমান যুদ্ধ এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে তারা গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে, গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপদেষ্টা রন ডেরমার এই বিষয়ে আলোচনার জন্য ইতালির রাজধানী রোমে মার্কিন বিশেষ দূতের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, এই আলোচনায় একটি সম্ভাব্য চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে হামাস জীবিত প্রায় ২০ জনসহ ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে পারে এবং ইসরায়েল কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিতে রাজি হতে পারে।
এছাড়া, যুদ্ধবিরতির সময় সাহায্য সরবরাহ বাড়ানোরও প্রস্তাব রয়েছে।
বুধবার রাতের হামলায় গাজা শহরের একটি বাড়িতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে ৬ জন শিশু ও ২ জন নারী ছিল।
এছাড়া, উত্তরাঞ্চলে একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলায় নিহত হয় ৬ জন, যাদের মধ্যে ৩ জন শিশু এবং ২ জন নারী ছিলেন। একটি তাঁবুতে হামলায় ৩ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৯,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অর্ধেকের বেশি। যদিও হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যকেই নির্ভরযোগ্য হিসেবে ধরা হয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস