গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাংবাদিক নিহত, আহত: আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড়। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় অনুযায়ী, খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের কাছে সাংবাদিকদের তাঁবু লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। নিহত সাংবাদিকের নাম হিলমি আল-ফাকাউয়ি, যিনি আগুনে পুড়ে মারা যান।
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক আবেড শাত জানান, ঘটনার সময় তিনি এবং তার সহকর্মীরা ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়।
বাইরে এসে তারা দেখতে পান, তাদের পাশের সাংবাদিকদের তাঁবুতে আগুন জ্বলছে। আবেড আরও জানান, তিনি আহত সহকর্মীদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন, কিন্তু আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে তিনি তাদের বাঁচাতে পারেননি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তারা হামাস সদস্য সন্দেহে হাসান ইসলাইহ নামে এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে। ইসলাইহ একজন সাংবাদিক এবং তার বিরুদ্ধে হামাসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তবে, ইসরায়েলি বাহিনী হামলার সময় সাংবাদিকদের তাঁবুকে কেন লক্ষ্যবস্তু করা হলো, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
এই ঘটনার পর, ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সমিতি এক বিবৃতিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা করে এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। তারা ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগ এনেছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় দুই শতাধিক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক সাংবাদিক হাসপাতালে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ সেখানে তারা তুলনামূলকভাবে ইন্টারনেট সংযোগ, বিদ্যুৎ এবং কিছুটা নিরাপত্তা পান।
সাংবাদিক সংগঠনগুলো মনে করে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, যাতে তারা গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে খবর প্রকাশ করতে না পারে। তাদের মতে, ইসরায়েল সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করছে, যা তারা বিশ্ববাসীর কাছে গোপন করতে চাইছে।
আল জাজিরায় কর্মরত সাংবাদিক হামজা ওয়াইল আল-দাহদাহসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিককে এর আগে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। হামজা ছিলেন আল জাজিরার গাজা ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল আল-দাহদাহের ছেলে।
গাজায় সাংবাদিকদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিক সংগঠন এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা