গাজায় ধ্বংসের চিত্র: ক্ষুধার্ত মানুষের লুট, বাড়ছে সহিংসতা!

গাজায় মানবিক বিপর্যয়: খাদ্য সংকটের মধ্যে লুটপাট ও সহিংসতার বৃদ্ধি। গত দুই মাস ধরে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

সেখানকার পরিস্থিতি এখন চরম মানবিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে অসহায় ফিলিস্তিনিরা লুটপাট ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। খবর অনুযায়ী, সেখানকার আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটজনক করে তুলেছে।

গাজার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, অনেক পরিবার দিনে একবারের বেশি খাবার পাচ্ছে না। জানা গেছে, সেখানকার বাজারে পচা আটা আগের দামের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

জ্বালানি তেলেরও অভাব দেখা দিয়েছে, যার ফলে মানুষ কাঠ ও পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পোড়াতে বাধ্য হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অপুষ্টির কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

এক সময় যেখানে প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষের জন্য খাবার পরিবেশন করা হতো, সেই কমিউনিটি রান্নাঘরগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তাদের কাছে থাকা খাদ্য সামগ্রীর মজুদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। গত মাসে রুটি সরবরাহকারী বহু বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, “এখানে কোনো জীবন নেই।”

পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু সশস্ত্র লোক মানবিক সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। তারা খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী লুট করছে। সম্প্রতি, গাজা শহরের একটি সাহায্য সংস্থার গুদামে হামলা চালিয়ে খাদ্য ও পানির জন্য হানা দেয় তারা।

এছাড়া, জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কর্মীরাও হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের অফিস থেকে ওষুধপত্র লুট করা হয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএ-এর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই লুটপাটের মূল কারণ হলো অসহনীয় ও দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য সংকট।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে সশস্ত্র ডাকাত ও নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গাজা শহরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তাদের বাড়ির কাছে একটি সাহায্য সংস্থার গুদামে হামলার ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে তারা অনেকক্ষণ ধরে গুলির শব্দ শুনেছেন।

আরেকজন নারী জানিয়েছেন, তিনি তার ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে জানতে পারেন, তাকে গুলি করা হয়েছে।

সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, গাজায় বর্তমানে চুরি ও ঘরোয়া সহিংসতার ঘটনাও বাড়ছে। সেখানকার বাসিন্দারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না।

কারণ, তাদের মধ্যে সবসময় লুটপাটের আতঙ্ক কাজ করে। জানা গেছে, সেখানকার অনেক পরিবার তাদের জিনিসপত্র রক্ষার জন্য পালা করে জেগে থাকছেন।

এমন পরিস্থিতিতে হামাস সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকজনকে শাস্তিও দিয়েছে।

তবে, ইসরায়েল সম্প্রতি অবরোধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে এবং গাজায় খাদ্য সহায়তা বিতরণের জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যদিও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই পরিকল্পনাকে ঝুঁকিপূর্ণ ও অকার্যকর বলে মনে করছে।

তাদের মতে, এই পরিস্থিতিতে সাহায্য বিতরণের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *