গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্যারামেডিকদের নৃশংস হত্যা: পরিবারে শোকের ছায়া

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত ১৫ জন প্যারামেডিকের মর্মান্তিক ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরিবারগুলো। জীবন বাঁচানোর ব্রত নিয়ে যাঁরা ছুটে গিয়েছিলেন, তাঁদের এভাবে প্রাণ হারানোয় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অনেকে।

সম্প্রতি রাফাহর কাছে বুলডোজার দিয়ে মাটির নিচে চাপা দেওয়া একটি স্থানে উদ্ধার করা হয় তাঁদের মরদেহ।

জানা যায়, নিহতদের মধ্যে ছিলেন রেড ক্রিসেন্ট অ্যাম্বুলেন্সের প্যারামেডিক সালেহ মোয়ামের। তাঁর ভাই বিলালের ভাষ্যমতে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সালেহ ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।

এর আগে, একবার ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে সালেহ গুরুতর আহত হয়েছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বাঁচলেও, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বিল্লালকে বলেছিলেন, “যেটা কপালে আছে, তাই হবে।

ঘটনার কয়েক দিন আগে, পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছিলেন সালেহ, যেন তাঁর কিছু হলে, পরিবারের সদস্যদের কোনো অসুবিধা না হয়।

আরেকজন প্যারামেডিক, মোহাম্মদ বাহলুলের বাবা, ৬৩ বছর বয়সী সোবহি বাহলুল জানান, মোহাম্মদ আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নার্সিংয়ে স্নাতক শেষ করে প্যারামেডিক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

তিনি ছিলেন সবসময় মানুষের সাহায্যার্থে প্রস্তুত। এমনকি, কোনো বেতন ছাড়াই ২০১৮ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছিলেন।

ঘটনার দিন, একটি বিমান হামলার খবর পেয়ে সালেহ ও তাঁর দল ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

সেখানে পৌঁছানোর পর, তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের সাথে যাওয়া অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

পরে জানা যায়, সেই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা প্যারামেডিক মুস্তাফা খাফাজা এবং ইজ্জ আল-দিন শাট নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর, সালেহ আরও একটি উদ্ধারকারী দল নিয়ে সেখানে যান, কিন্তু এরপর তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরে, আটক হওয়া এক প্যারামেডিক জানান, ইসরায়েলি বাহিনী তাঁদের অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

এরপর বুলডোজার দিয়ে তাঁদের গাড়িসহ মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হয়। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের স্বজনদের মরদেহ খুঁজে বের করতে এক সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করেন।

পরিবারগুলোর অভিযোগ, নিহতদের হাত-পা বাঁধা ছিল এবং তাঁদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যদিও দাবি করেছে, অ্যাম্বুলেন্সগুলো সম্ভবত হামাসের যোদ্ধাদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছিল।

তবে, নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, “তাঁদের অপরাধ কী ছিল?” মানবিকতার খাতিরে জীবন উৎসর্গ করা মানুষগুলোর প্রতি এমন নিষ্ঠুরতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *