গাজায় ফিলিস্তিনি প্যারামেডিকদের হত্যা: ইসরায়েলি বাহিনীর দাবিকে নাকচ করে নতুন তথ্য
গত মাসে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ১৫ জন ফিলিস্তিনি প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনায় নতুন তথ্য সামনে এসেছে, যা ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)-এর দেওয়া বিবৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানিয়েছে, আইডিএফের অভ্যন্তরীণ তদন্তের অংশ হিসেবে সংগৃহীত তথ্যের বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, সেনারা নির্বিচারে ফিলিস্তিনি অ্যাম্বুলেন্স ও দমকল কর্মীদের ওপর গুলি চালায়নি—এমন দাবি সঠিক নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন, ২৩শে মার্চের প্রথম দিকে, সাহায্যকর্মীরা নিজেদের পরিচয় জানানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও সেনারা প্রায় সাড়ে তিন মিনিট ধরে তাদের লক্ষ্য করে অবিরাম গুলি চালিয়েছিল। হামলায় জীবিত দুইজনের মধ্যে একজন, আসাদ আল-নাসাসরাহর পরিবার ইসরায়েলের হাইকোর্টে একটি আবেদন করেছেন।
তারা জানতে চেয়েছেন, আসাদকে ঠিক কোথায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে জানায়, নাসাসরাহ তাদের হেফাজতে আছেন। তবে জরুরি যুদ্ধ আইনের অধীনে গাজা থেকে আটককৃতদের বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখা যায় এবং তাদের আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রেও ৪৫ দিন পর্যন্ত বাধা দেওয়া যেতে পারে।
আগামী ৭ই মের আগে নাসাসরাহ-কে কোনো আইনি সহায়তা দেওয়া যাবে না।
রাজনৈতিক অঙ্গনে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তার বরখাস্ত করা শিন বেট প্রধান রোনেন বার-এর হলফনামার জবাব দেওয়ার জন্য রবিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, নেতানিয়াহু নিরাপত্তা প্রধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনবেন। এর আগে, বরখাস্ত হওয়া শিন বেট প্রধান তার নিজের ৩১ পৃষ্ঠার হলফনামায় বিভিন্ন অভিযোগ করেন।
গত মাসে মন্ত্রিসভার ভোটের পর সুপ্রিম কোর্ট বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারাসহ অনেকে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তাদের মতে, এই বরখাস্ত বেআইনি হতে পারে।
নেতানিয়াহু এবং বারের মধ্যেকার এই বিরোধ ইসরায়েলে সাংবিধানিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শিন বেট নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করছে।
এর মধ্যে বিদেশি গণমাধ্যমে গোপন নথি পাচার এবং হামাসকে অর্থ দেওয়ার জন্য পরিচিত কাতার থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
বার তার হলফনামায় অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু তাকে বরখাস্ত করতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর নজরদারি করতে এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চলমান মামলার শুনানির তারিখ পিছিয়ে দিতে রাজি হননি। বার আরও জানান, তাকে ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুগত থাকতে বলা হয়েছিল।
নেতানিয়াহু বলেছেন, শিন বেটের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বারের ওপর তিনি আস্থা হারিয়েছেন। বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও জোরালো করতে তিনি শিন বেটের একজন এজেন্ট ও একজন পুলিশ অফিসারের মধ্যেকার ফোনালাপের একটি রেকর্ড প্রকাশ করেন।
তার দাবি, এই রেকর্ডে প্রমাণ হয় যে সংস্থাটি “ডানপন্থী কর্মীদের ওপর নিপীড়ন চালায়।”
গত ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা বিপর্যয়ের পর নেতানিয়াহু কোনো দায় স্বীকার করেননি।
ওই হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। এছাড়াও, ২৫১ জনকে গাজা উপত্যকায় বন্দী করে রাখা হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রভাবশালী শ্রমিক ইউনিয়ন হিস্টাদ্রুটের প্রধান আর্নন বার-ডেভিড বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সরকার যদি বারকে পুনর্বহাল করার আদালতের নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে দেশব্যাপী ধর্মঘট ডাকা হবে।
তিনি এই পদক্ষেপকে ‘লাল রেখা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ইতিপূর্বে হিস্টাদ্রুটের দুটি ধর্মঘটের কারণে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ডানপন্থী জোট বেশ চাপে পড়েছিল।
২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে প্রথম ধর্মঘট হয়। আর, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে সেপ্টেম্বরে ধর্মঘট হয়।
গাজায় বুধবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘের মূল্যায়ন অনুযায়ী, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য সঠিক।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান