গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের ৬০ দিন: মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবরোধের ৬০ দিন পূর্ণ হয়েছে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে খাদ্য, পানি ও জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এলাকাটিতে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। একইসাথে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (International Court of Justice – ICJ বা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত) ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের মানবিক দায়িত্ব নিয়ে শুনানির তৃতীয় দিন চলছে।
জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme – WFP)-এর মতে, গাজার খাদ্য গুদামগুলো প্রায় খালি হয়ে গেছে এবং সেখানকার বেকারিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা (UN Office for the Coordination of Humanitarian Affairs – OCHA)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, বাস্তুচ্যুত মানুষেরা তাদের কাছে থাকা খাদ্য সরবরাহও হারাচ্ছে। রান্নার জ্বালানি এবং গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই খাবার তৈরি করতে পারছে না। এছাড়া, কৃষকদের তাদের জমিতে যেতে না দেওয়ায় খাদ্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ‘নো-গো’ এলাকা ঘোষণার কারণে প্রায় ৭০ শতাংশ জমি এখন মানুষের নাগালের বাইরে।
গাজার হাসপাতালগুলোতে আহত ও অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে সেখানে অনেক রোগী মারা যাচ্ছে। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে সাধারণ ব্যথানাশক ঔষধের পর্যন্ত অভাব দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (UNRWA)-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, গাজার অবশিষ্ট কয়েকটি স্যুপ রান্নাঘরও সাহায্য না পেলে কয়েক দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে, সেখানকার অনেক পরিবার খাবার হিসেবে যা পাচ্ছে, তাই খেতে বাধ্য হচ্ছে, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
অন্যদিকে, আল জাজিরা আরবি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্ত এলাকায় এখনো অনেক সাহায্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে আছে। সেখানকার এনজিও ‘মার্সি কর্পস’-এর তথ্য অনুযায়ী, অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্যপণ্যের দাম ৫০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, অবিলম্বে অবরোধ তুলে না নিলে খাদ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়তে পারে।
গাজায় খাদ্য ও অপুষ্টির পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন’ (Integrated Food Security Phase Classification – IPC) নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ শুরু করেছে। ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই মূল্যায়নের কাজ এক সপ্তাহ ধরে চলবে। এতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থার ৫০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞ অংশ নিচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক আইনি উপদেষ্টা আদালতকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল তাদের নিরাপত্তা স্বার্থের কারণে গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা UNRWA-এর সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য নয়। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা বিষয়ক ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতা নিয়ে এই শুনানি চলছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা