গাজায় যুদ্ধের বিভীষিকা: ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা তরুণীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শিশুদের জীবন ওলট-পালট করে দিয়েছে। এখানকার ১৮ বছর বয়সী সারা কানানের চোখে ছিল ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু ইসরায়েলি হামলায় তার ঘর, বইপত্র—সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে।
এখন জীবন বাঁচানোই তার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সেগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, যুদ্ধের কারণে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বর্তমানে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।
এর মধ্যে ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সুযোগ পায়নি, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে সারা এখন দিন কাটায়। সেখানকার গরম আর অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়াশোনা করা কঠিন। তাদের পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
তাদের বাড়িঘরও বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। সারার কথায়, “ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা এখন আর দেখি না। এখন শুধু কীভাবে বাঁচা যায়, সেই চিন্তাই করি।”
ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজায় প্রায় ৯০ শতাংশ স্কুল মেরামতের অভাবে পুনরায় চালু করা যাচ্ছে না। এমনকি যুদ্ধবিরতি হলেও কবে নাগাদ সবকিছু স্বাভাবিক হবে, তা অনিশ্চিত।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়াশোনার সরঞ্জাম খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। সারা জানায়, তার একমাত্র স্বপ্ন ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা।
কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
যুদ্ধ শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তারা একদিকে যেমন সহিংসতার শিকার হচ্ছে, তেমনি তাদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতি।
অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু গাজায় বিদ্যুতের অভাব এবং দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের কারণে তাদের সমস্যা হচ্ছে। সারা কানানের বাবা ইব্রাহিম কানান একজন সাংবাদিক।
তিনি বলেন, “যুদ্ধ আমাদের জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে। আমাদের স্বপ্নগুলো যেন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
হামাসের হামলায় নিহত হয় প্রায় ১,২০০ জন, যাদের মধ্যে সাধারণ মানুষও ছিল।
যুদ্ধ শিশুদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শিক্ষা, ভবিষ্যৎ—সবকিছুই আজ অনিশ্চিত।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস