গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতার জানিয়েছে, আলোচনা কিছুটা এগিয়েছে, তবে এখনও অনেক পথ বাকি। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অবরুদ্ধ গাজায় অবিলম্বে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সেখানকার ফিলিস্তিনিরা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের দোহায় সাক্ষাৎ হয়েছে। তাঁদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল গাজায় ইসরায়েলের ১৮ মাসের যুদ্ধ।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আগের আলোচনার চেয়ে কিছুটা অগ্রগতি দেখেছি, তবে মূল প্রশ্ন হলো, কীভাবে এই যুদ্ধের অবসান ঘটানো যায়। আলোচনার মূল বিষয় এটিই।’
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়াও নতুন করে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য সম্প্রতি দোহায় গিয়েছিলেন। তবে কাতার জানিয়েছে, হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনার চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে এখনও মতভেদ রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি ফিরিয়ে আনার জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেলে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে এবং এর ওপর অবরোধ আরোপ করে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান গাজায় ইসরায়েলের ‘জাতিগত নির্মূলের’ তীব্র নিন্দা করে বলেন, এটি আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইনের পরিপন্থী। তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা পৌঁছায়নি।
পুরো বিশ্ব এই মানবিক সংকট প্রত্যক্ষ করছে। আমাদের গাজায় আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং জরুরি ভিত্তিতে সেখানে ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজার খাদ্যগুদামগুলো খালি হয়ে যাওয়ায় সেখানকার ফিলিস্তিনিরা অনাহারের শিকার হতে পারে। জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (ইউএনআরওয়া) বলেছে, গাজার জনগণের ওপর অবরোধের খেসারত হিসেবে মারাত্মক সহিংসতা এবং চরম দুর্দশা নেমে এসেছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলের এই সম্মিলিত শাস্তি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
গাজায় জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় কার্যালয়ের প্রধান জোনাথন হুইটলের মতে, ইসরায়েল বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ থেকে বঞ্চিত করে সহায়তাকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, ‘আজ গাজায় মানুষজন টিকতে পারছে না। বোমা ও বুলেটে যারা মারা যাচ্ছে না, তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানবিক সহায়তা বন্ধ করার কোনো যুক্তি নেই। মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।’
গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার মধ্যেই ইসরায়েল সেখানে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। রবিবার ভোর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে।
হাসপাতালে আহত শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ৫২ হাজার ২৪৩ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৩৯ জন আহত হয়েছেন।
গাজার মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও ৬১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষের মরদেহ রয়েছে।
অন্যদিকে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং ২০০ জনের বেশি মানুষ বন্দী হয়।
গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল-জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজ্জুম ইসরায়েলের বিমান ও স্থল হামলাকে ‘বিধ্বংসী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি জানান, ‘মনে হচ্ছে ইসরায়েল ও হামাস দীর্ঘ সময় ধরে এই যুদ্ধে আটকে আছে এবং ইসরায়েলি বিমান হামলা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এখনও চলছে।’
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা