গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন ১০০ শিশু হতাহত হচ্ছে, জাতিসংঘের উদ্বেগ।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত ১৮ই মার্চ থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০০ জন শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (UNRWA)-এর প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি এক বিবৃতিতে শিশুদের ওপর এই সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিশুদের জন্য গাজাকে কার্যত একটি ‘নো ল্যান্ড’–এ পরিণত করা হয়েছে, যেখানে শিশুদের জীবন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ (UNICEF) জানিয়েছে, ১৮ই মার্চ থেকে ইসরায়েলের নতুন করে অভিযান শুরুর পর থেকে অন্তত ৩২২ জন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত ১৯শে জানুয়ারী থেকে দুই মাসের জন্য যে ‘যুদ্ধবিরতি’ চুক্তি হয়েছিল, তা ভেঙে যাওয়ার পরেই শিশুদের ওপর এই নৃশংসতা বাড়ে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, এই যুদ্ধবিরতি গাজার শিশুদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল এবং তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে শিশুরা আবারও মারাত্মক সহিংসতা ও কষ্টের মধ্যে পড়েছে।
ফিলিস্তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫ই এপ্রিল, ফিলিস্তিন শিশু দিবস উপলক্ষে জানায়, ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার হওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ১৭,০০০ এর বেশি শিশু নিহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শিশুদের ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা, আটক ও নির্যাতনের’ অভিযোগ এনেছে। হামাস সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের এই ধরনের কর্মকাণ্ড ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে আরও বেশি অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত করবে।
হামাস আরও জানায়, ৭ই অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় ১,১০০ শিশুকে আটক করেছে এবং সহিংসতার কারণে প্রায় ৩৯,০০০ শিশু তাদের মা-বাবাকে হারিয়েছে।
ফিলিস্তিনের বন্দি বিষয়ক কমিশন, প্রিজনার সোসাইটি এবং মানবাধিকার সংস্থা আদ্দামিরের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ৭ই অক্টোবর ২০২৩ থেকে ১,২০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে আটক করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আটক শিশুদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তাদের খাবার ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।
সম্প্রতি, গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে প্রথম কোনো শিশু বন্দি হিসেবে ১৭ বছর বয়সী ওয়ালিদ আহমাদ মেগিদ্দো কারাগারে মারা যায়।
ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইসরায়েলি কারাগারে ৯,৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দী রয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও ৩৫০ জনের বেশি শিশুও রয়েছে। UNRWA জানিয়েছে, ১৮ই মার্চ থেকে ২৩শে মার্চের মধ্যে ১,৪২,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
সংস্থাটি গাজায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ— যাদের মধ্যে হাজার হাজার শিশুও রয়েছে—বোমা হামলা, আতঙ্ক এবং ক্ষতির মধ্যে বারবার তাদের বাসস্থান ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গত নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
ইসরায়েল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ)-এ গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা