আতঙ্কের ছবি! ডিজিটাল জগৎ ছেড়ে পথে নামছে ‘জেনারেশন জি’?

বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রজন্মের প্রতিবাদের ঢেউ: ডিজিটাল জগৎ থেকে রাজপথে।

বর্তমান বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ক্রমশ বাড়ছে। মরক্কো থেকে মাদাগাস্কার, পেরু থেকে নেপাল—বিভিন্ন দেশে ‘জেনারেশন Z’ (Gen Z)-এর যুবকরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে একত্রিত হচ্ছে এবং তাদের দাবি নিয়ে রাজপথে নামছে।

এই প্রতিবাদের মূল কারণগুলো হলো—বেড়ে চলা বৈষম্য, কর্মসংস্থানের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো উদ্বেগের সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা।

এই প্রতিবাদের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল দুনিয়াকে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ডিসকর্ড ও টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের একত্রিত হতে এবং দ্রুত তথ্য আদান প্রদানে সাহায্য করছে।

মরক্কোর ‘GenZ 212’ নামক একটি ডিসকর্ড সার্ভার কয়েক দিনের মধ্যেই ৩,০০০ থেকে ১,৩০,০০০ সদস্যে পৌঁছেছিল, যা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আন্দোলনের দ্রুত বিস্তারের প্রমাণ।

কিন্তু কেন এই বিক্ষোভ?

বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদের কারণগুলো ভিন্ন হলেও কিছু মিল রয়েছে। মরক্কোতে, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে।

সেখানে সরকার বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য বিপুল অর্থ খরচ করলেও হাসপাতালগুলোতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না এবং তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। দেশটির যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ৩৬ শতাংশ।

মাদাগাস্কারে, পানির অভাব এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হলেও তা দ্রুত সরকার পরিবর্তনের দাবিতে রূপ নেয়।

পেরুতে, পেনশন আইনের সংস্কারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা পরে দুর্নীতি, দমন-পীড়ন এবং ক্রমবর্ধমান অপরাধের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে পরিণত হয়।

নেপালের উদাহরণ

নেপালে সরকার কর্তৃক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুত দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পরিণত হয়।

অল্প সময়ের মধ্যেই, বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে।

এই প্রতিবাদের ঢেউ শুধু একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।

বিভিন্ন দেশের তরুণ প্রজন্ম একে অপরের কাছ থেকে শিখছে এবং অনুপ্রাণিত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের সরকারগুলোর নীতি, অনেক ক্ষেত্রে, তরুণ প্রজন্মের জীবনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তরুণদের ভবিষ্যৎ জীবনের ধারণা যেন দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তরুণ প্রজন্মের এই প্রতিবাদগুলো বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

বাংলাদেশেও তরুণরা কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং রাজনৈতিক অধিকারসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার এখানেও বাড়ছে, এবং তরুণ প্রজন্ম তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা কমছে, তবে তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে এখনও সমর্থন করে। autoritarianism, xenophobia, and nationalism-এর মতো বিষয়গুলোও তরুণদের মধ্যে বিদ্রোহের জন্ম দিচ্ছে।

উপসংহার

বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রজন্মের এই বিক্ষোভগুলো একটি গভীর পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, বিভিন্ন দেশের তরুণদের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ এবং একটি উন্নত ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা—এগুলো সবই এই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দিক।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য, এই ঘটনাগুলো তাদের নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *