জিনগত ত্রুটি: জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াকু শিশুর নতুন জীবন!

বিরল এক জন্মগত রোগ নিয়ে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর জীবন বাঁচাতে এক অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এই চিকিৎসা পদ্ধতির সফলতার ফলে ভবিষ্যতে হয়ত লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার ক্লিফটন হাইটসের বাসিন্দা ছোট্ট কেজে (KJ) বিরল জিনের ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। চিকিৎসকরা জানান, সি পি এস ১ (CPS1) নামক এই বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের শরীরে অ্যামোনিয়া জমতে শুরু করে, যা তাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের অর্ধেকের বেশি এক বছরের মধ্যে মারা যায়।

সাধারণত, লিভার প্রতিস্থাপন এই রোগের চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কেজের বাবা-মা, কাইল ও নিকোল মুলডুন, তাদের সন্তানের জীবন নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। তারা জানান, সন্তানের চিকিৎসার জন্য তাঁরা সম্ভাব্য সব উপায় নিয়ে ভেবেছেন।

নিকোল বলেন, “আমরা অনেক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম, নানা জনের সঙ্গে কথা বলেছি। অবশেষে আমরা এই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির দিকে ঝুঁকেছি।”

চিকিৎসকরা জানান, কেজের চিকিৎসার জন্য তারা জিন সম্পাদনার (gene editing) একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে তারা কেজের ক্ষতিগ্রস্ত জিন (faulty gene) পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন।

এই চিকিৎসার জন্য তারা CRISPR প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন, যা ২০১৯ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছে। CRISPR পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ-র ভুল “লেটার” বা বেস পরিবর্তন করে সঠিক করার মাধ্যমে ত্রুটি সারানো হয়। এই পদ্ধতিতে অপ্রত্যাশিত জিনগত পরিবর্তনের ঝুঁকিও অনেক কম থাকে।

ফিলাডেলফিয়ার চিলড্রেনস হসপিটাল ও পেন মেডিসিনের চিকিৎসক এবং গবেষকরা যৌথভাবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করেছেন। তাঁরা জানান, এই চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য শরীরের কোষে পৌঁছে দেওয়ার জন্য লিপিড ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করা হয়েছে।

কেজে-কে ফেব্রুয়ারি মাসে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর মার্চ ও এপ্রিল মাসেও তাকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কেজে আগের চেয়ে অনেক বেশি সুস্থ আছে।

সে স্বাভাবিকভাবে খাবার গ্রহণ করতে পারছে এবং ঠান্ডা লাগার মতো সাধারণ রোগ থেকেও দ্রুত সেরে উঠছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, যদিও এই চিকিৎসা পদ্ধতির ফলাফল এখনো কয়েক মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, কেজে’র শারীরিক উন্নতি খুবই ইতিবাচক।

তারা আশা করছেন, এই চিকিৎসা পদ্ধতি ভবিষ্যতে বিরল রোগে আক্রান্ত আরও অনেক শিশুর জীবন বাঁচাতে পারবে।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, এই ধরনের চিকিৎসার খরচ লিভার প্রতিস্থাপনের কাছাকাছি, যা প্রায় ৮ লক্ষ মার্কিন ডলার। তবে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে খরচ কমানো সম্ভব হবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই গবেষণা বিরল রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

ইউনিভার্সিটি অফ মায়ামির অধ্যাপক কার্লোস মোরাইস বলেন, “এই ধরনের সাফল্যের ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞান আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

এই পথে কিছু বাধা অবশ্যই আছে, তবে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে সেগুলোও পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *