ঐতিহাসিক! বিরল রোগ থেকে শিশুকে বাঁচাতে চিকিৎসকদের যুগান্তকারী আবিষ্কার!

জিনগত ত্রুটি সারিয়ে বিরল রোগের চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছেন চিকিৎসকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার একটি হাসপাতালে বিরল রোগে আক্রান্ত এক শিশুর চিকিৎসায় জিন সম্পাদনা (gene-editing) প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই সাফল্য পাওয়া গেছে।

চিকিৎসকদের এই নতুন উদ্ভাবন চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।

**বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুর জীবন বাঁচানোর লড়াই**

২০২৪ সালের আগস্ট মাসে কেজে (KJ) মালডুন নামক এক শিশু বিরল ‘সিভিয়ার কার্বাময়েল ফসফেট সিনথেটেজ ১ (CPS1) ডেফিসিয়েন্সি’ (গুরুতর কার্বাময়েল ফসফেট সিনথেটেজ ১ অভাব) নামক একটি রোগ নিয়ে জন্মায়। এই রোগ শিশুদের শরীরে বিপাক ক্রিয়াকে (metabolic process) মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।

সাধারণত প্রতি ১৩ লক্ষ শিশুর মধ্যে একজনের এই রোগ হতে দেখা যায়। জন্মের পর দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে, আক্রান্ত শিশুদের এক সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

সৌভাগ্যবশত, শিশুটির বাবা-মা’র চেষ্টায় চিকিৎসকেরা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হন।

চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, এই রোগের কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপনেরও প্রয়োজন হতে পারে।

কেজের বাবা-মা, নিকোল ও কাইল মালডুন, দ্রুত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন ড. রেবেকা আহরেন্স-নিকলাস এবং ড. কিরণ মুসুনুরু।

২০২৩ সাল থেকে ড. আহরেন্স-নিকলাস এবং ড. মুসুনুরু বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের জিনগত ত্রুটি সারানোর উপায় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাঁদের যৌথ প্রচেষ্টায়, কেজের জন্য বিশেষভাবে একটি চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করা হয়।

এরপর, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিশুটিকে এই বিশেষ থেরাপি দেওয়া শুরু হয়।

**জিন সম্পাদনার মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের আশা**

চিকিৎসকরা জানান, এই থেরাপিতে কয়েক বিলিয়ন অতি ক্ষুদ্র জিন-এডিটর ব্যবহার করা হয়েছে, যা শিশুর লিভারে থাকা ত্রুটিপূর্ণ জিনকে (gene) চিহ্নিত করে সারিয়ে তোলে।

চিকিৎসার পর কেজের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। এপ্রিল মাসের হিসাব অনুযায়ী, শিশুটিকে এই থেরাপির তিনটি ডোজ দেওয়া হয়েছে এবং কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা নিয়মিতভাবে কেজের শারীরিক অবস্থার উপর নজর রাখছেন।

জিন সম্পাদনার অগ্রগতি এবং গবেষক ও চিকিৎসকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ এই সাফল্য এসেছে। কেজে-র ক্ষেত্রে এটি একটি দৃষ্টান্ত। আমরা আশা করি, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অন্যান্য বিরল রোগেও আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।

ড. আহরেন্স-নিকলাস

আমরা চাই প্রত্যেক রোগী এই চিকিৎসার সুফল পাক। দশকের পর দশক ধরে জিন থেরাপির যে সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয়েছে, তা এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এবং চিকিৎসা পদ্ধতির ধারণা সম্পূর্ণভাবে বদলে যাচ্ছে।

ড. মুসুনুরু

চিকিৎসার সাফল্যের ফলে কেজের পরিবারে আনন্দের জোয়ার এসেছে। বাবা কাইল মালডুন বলেন, “কেজের জন্মের পর থেকেই আমরা হাসপাতালে ছিলাম। এখন তাকে সুস্থ অবস্থায় পরিবারের সঙ্গে কাছে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত।”

এই সাফল্যের মাধ্যমে চিকিৎসকেরা বিরল রোগের চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আরও অনেক বিরল রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি কাজে লাগানো যাবে এবং রোগীরা সুস্থ জীবন ফিরে পাবে।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *