হ্যাকম্যান ও আরাকাওয়ার মৃত্যু: মৃত্যুর আগে কী ঘটেছিল?

অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান এবং তাঁর স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়ার মৃত্যুরহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁদের মৃত্যুর আগের কিছু মুহূর্তের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, যা অনেকের মনে গভীর কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, আরাকাওয়া মৃত্যুর আগে ফ্লু-এর মতো উপসর্গ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করেছিলেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে-তে তাঁদের বাড়িতেই হ্যাকম্যান ও আরাকাওয়ার মরদেহ পাওয়া যায়। তদন্তে জানা যায়, আরাকাওয়া ‘হান্তাভাইরাস পালমোনারি সিন্ড্রোম’ (Hantavirus Pulmonary Syndrome) নামক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই রোগটি ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়ায় এবং এর উপসর্গ হিসেবে ফ্লু-এর মতো অসুস্থতা, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

অন্যদিকে, হ্যাকম্যানের মৃত্যু হয় হৃদরোগ এবং আলঝেইমার্স (Alzheimer’s Disease) রোগের জটিলতার কারণে।

তদন্তকারীরা আরাকাওয়ার কম্পিউটারের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানতে পারেন, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তিনি কোভিড-১৯ (COVID-19) এবং ফ্লু-এর মতো উপসর্গ নিয়ে অনলাইনে বেশ কিছু অনুসন্ধান করেছিলেন। তিনি কোভিড-১৯ এর কারণে মাথা ঘোরা অথবা নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মতো কোনো সমস্যা হয় কিনা, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছিলেন।

এমনকি, আরাকাওয়া তাঁর ম্যাসাজ থেরাপিস্টকে একটি ইমেইল করে জানিয়েছিলেন, হ্যাকম্যান ১১ই ফেব্রুয়ারি সকালে ফ্লু অথবা ঠান্ডার মতো উপসর্গ নিয়ে জেগে উঠেছিলেন, যদিও কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছিল।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, আরাকাওয়া মৃত্যুর আগে সান্তা ফে-র একটি চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্রে ফোন করেছিলেন। এই বিষয়ে তাঁর ফোন রেকর্ডও খতিয়ে দেখা হয়েছে।

এছাড়া, হ্যাকম্যানের বাড়িতে ফোন করার ইতিহাস এবং ঘটনার দিন আরাকাওয়ার বিভিন্ন দোকানে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

পুলিশের বডি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, কর্মকর্তারা যখন ঘটনাস্থলে যান, তখন আরাকাওয়ার মরদেহ বাথরুমের কাছে এবং হ্যাকম্যানের মরদেহ বাড়ির অন্য একটি অংশে পাওয়া যায়। কর্মকর্তারা গ্যাস লিকের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং ঘরটির দরজা-জানালা খুলে দেন।

তবে, পরে পরীক্ষায় কোনো গ্যাস লিকের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তদন্তকারীরা ঘরটির বিভিন্ন কক্ষে অনুসন্ধান চালান এবং সেখানে অস্বাভাবিক কিছু খুঁজে পাননি। ঘরের ভেতরে মূল্যবান চিত্রকর্মসহ অন্যান্য জিনিসপত্র আগের মতোই ছিল।

এছাড়া, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা নগদ অর্থের পরিমাণও গণনা করা হয়।

আদালতের নির্দেশে প্রকাশিত এই তদন্ত প্রতিবেদনে মৃতদের ছবি প্রকাশ করা হয়নি। হ্যাকম্যানের পরিবার তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনকে সম্মান জানাতে এবং গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এই তথ্যগুলো প্রকাশে আপত্তি জানিয়েছিল।

তদন্তে আরও জানা গেছে, হ্যাকম্যানদের বাড়ির বাইরের কিছু অংশে, যেমন—গুদামে ইঁদুরের বিষ্ঠা পাওয়া গেছে। তবে, বাড়ির ভেতরে ইঁদুরের আনাগোনার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

উল্লেখ্য, এই অঞ্চলের অনেক বাড়িতেই ইঁদুরের উপদ্রব দেখা যায়।

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, হ্যাকম্যানের পরিবার তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য আইনি লড়াই চালিয়েছিল।

তাঁদের আইনজীবী জানান, এই দম্পতি সবসময় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে চেয়েছিলেন এবং তাঁদের মৃত্যুর পরও সেই অধিকার রক্ষা করা উচিত।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *