বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জিনোম বিজ্ঞানীরা ২০২৩ সালের ‘বর্ষসেরা অমেরুদণ্ডী প্রাণী’র ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করতে প্রস্তুত হচ্ছেন। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন করা।
যুক্তরাজ্যের ‘স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউট’-এর ‘ট্রি অফ লাইফ প্রোগ্রাম’-এর বিজ্ঞানীরা এই বিশাল কর্মযজ্ঞের নেতৃত্ব দেবেন।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির ডিএনএ সিকোয়েন্স তৈরি করা হবে, যা জীবনের বিবর্তন এবং প্রকৃতি সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। প্রতি বছর ‘বর্ষসেরা অমেরুদণ্ডী প্রাণী’ নির্বাচনের একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, কীট, এবং অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে থেকে সেরাটিকে বেছে নেওয়া হয়।
বিজ্ঞানীরা এই প্রতিযোগিতার বিজয়ীর জিনোম সিকোয়েন্সিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গবেষকরা বলছেন, প্রতিটি জীবের জিনোম হলো এক প্রকার টাইম মেশিন, যা তাদের বিবর্তনের ইতিহাস জানতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে একটি প্রজাতি কীভাবে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।
ইতোমধ্যে তারা টার্ডিগ্রেড (Tardigrade) বা জলজ ভালুক, রটিফার (Rotifer) সহ আরও কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণীর জিনোম সিকোয়েন্স তৈরি করেছেন। টার্ডিগ্রেড খুবই ক্ষুদ্র আকারের প্রাণী, যা চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারে।
এদের ডিএনএ এবং কোষগুলি শুকিয়ে গেলেও অক্ষত থাকে, যা বিজ্ঞানীদের কাছে এক বিস্ময়।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ধরনের প্রাণীদের জিনোম অধ্যয়নের মাধ্যমে তারা এমন কিছু কৌশল খুঁজে বের করতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে মানুষের উপকারে আসবে। উদাহরণস্বরূপ, এমন ভ্যাকসিন তৈরি করা যেতে পারে যা রেফ্রিজারেশনের প্রয়োজন হবে না, অথবা মহাকাশচারীদের জন্য মহাকাশের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
‘ট্রি অফ লাইফ প্রোগ্রাম’-এর প্রধান, মার্ক ব্লাক্সটার বলেন, “আমরা আমাদের গ্রহকে আরও ভালোভাবে রক্ষা করতে চাই। তাই এই ক্ষুদ্র প্রাণীদের জিনোমে লুকানো এমন অনেক কিছু আছে যা আমাদের জন্য খুবই মূল্যবান হতে পারে।
তিনি আরও জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ডের প্রায় ৭০,০০০ প্রজাতির জিনোম সিকোয়েন্স তৈরি করা হবে। এর ফলে বিজ্ঞানীরা প্রাণীগুলির জনসংখ্যা, তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, এবং পরিবেশের উপর তাদের প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারবেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীববৈচিত্র্যের উপর যে হুমকি তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলা করতে এই গবেষণা বিশেষভাবে সহায়ক হবে।
বর্তমানে ‘বর্ষসেরা অমেরুদণ্ডী প্রাণী’ নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণ চলছে। আগামী ৭ এপ্রিল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান