স্মৃতিমেদুর: জিওফ ডায়ারের নতুন বই, এক ঝলকে শৈশব

ষাটের দশকের শেষ থেকে সত্তরের দশকের ইংল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি নিয়ে জিওফ ডায়ারের আত্মজীবনীমূলক নতুন বই ‘হোমওয়ার্ক’। বইটি মূলত লেখক জিওফ ডায়ারের বেড়ে ওঠার গল্প, যেখানে উঠে এসেছে তাঁর শৈশব, স্কুল জীবন, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক এবং সময়ের বিবর্তনের প্রেক্ষাপট।

বইটিতে ডায়ারের শৈশব শহর চেলটেনহামের জীবনযাত্রা, তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক, বন্ধুদের কথা, এবং পরবর্তীকালে অক্সফোর্ডে তাঁর পড়াশোনার দিনগুলির স্মৃতিচারণা করা হয়েছে। ডায়ারের বাবা ছিলেন একজন বিমান প্রকৌশলী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর মা ছিলেন স্কুল ক্যান্টিনের কর্মী এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী।

লেখকের বেড়ে ওঠা ছিল একান্নবর্তী পরিবারে, যেখানে প্রাচুর্যের বদলে ছিল সাদামাটা জীবন। খেলনা সৈনিক, বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি, কোমল পানীয়, এবং ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট টিভিতে দেখা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছিল তাঁর শৈশবের একঘেয়ে জীবনের সঙ্গী।

ডায়ারের লেখায় বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে সত্তরের দশকের ইংল্যান্ডের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট। সেই সময়ের পোশাক, ফ্যাশন, এবং জীবনযাত্রার ছবি বইটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তিনি তাঁর শৈশবকালে জনপ্রিয় বিভিন্ন খেলনা এবং শখের কথাও উল্লেখ করেছেন, যা পাঠকদের নস্টালজিক করে তুলবে।

বইটিতে লেখকের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে, যেমন – তাঁর মায়ের জন্মদাগ এবং কিশোর বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর কিছু অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা।

ডায়ারের ভাষাশৈলী অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও স্বতঃস্ফূর্ত। তিনি তাঁর শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিগুলি হাস্যরস এবং গভীর অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। বইটি একদিকে যেমন একটি পরিবারের গল্প, তেমনই একটি বিশেষ সময়ের প্রতিচ্ছবি।

বইটি পাঠকদের সেই সময়ের সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবন সম্পর্কে ধারণা দেবে এবং একই সঙ্গে লেখকের ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত করবে।

বইটির মূল আকর্ষণ হলো লেখকের আত্ম-অনুসন্ধান। তিনি তাঁর জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, যা পাঠকদের আত্ম-উপলব্ধিতে সাহায্য করবে। বইটি কেবল একটি স্মৃতিচারণমূলক রচনা নয়, বরং সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবন ও সম্পর্কের জটিলতাকেও তুলে ধরে।

সব মিলিয়ে, ‘হোমওয়ার্ক’ একটি উপভোগ্য এবং গভীর অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ আত্মজীবনী, যা পাঠককে ভিন্ন এক জগতে নিয়ে যাবে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *