মিনিয়াপলিসের সাবেক পুলিশ প্রধান মেদারিয়া আ্যারাডোনডো, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পঞ্চম বার্ষিকীতে সেই মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেন, শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন যখন জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে বসে ছিলেন, তখন তার সেই দৃশ্য দেখাটা ছিল “ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতা”।
ফ্লয়েড “আমি শ্বাস নিতে পারছি না” বলে আকুতি জানালেও শভিন প্রায় নয় মিনিটের বেশি সময় ধরে তার ঘাড়ে চাপ দিয়ে রেখেছিলেন। ২০২০ সালের ২৫শে মে, ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর সারা বিশ্বে বর্ণবাদ এবং পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
এই ঘটনার পর শহরটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সাবেক পুলিশ প্রধান হিসেবে আ্যারাডোনডো সেই সময়কার পরিস্থিতি এবং এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানান, ঘটনাটি তার নিজের এবং শহরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল।
আ্যারাডোনডো স্মৃতিচারণ করে বলেন, তিনি যখন প্রথম এই ঘটনার ভিডিও দেখেন, তখন তার ভেতরের মানুষটা একেবারে ভেঙে পড়েছিল। তিনি বলেন, “আমি ৩৩ বছর ধরে পুলিশের চাকরি করেছি, কিন্তু জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু আমার কর্মজীবনে একটি গভীর প্রভাব ফেলেছে।”
ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর তিনি শভিনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন, যা পুলিশ বিভাগের ‘ব্লু ওয়াল’ ভেঙে দেয়ার মতো ছিল। সাধারণত, পুলিশ অফিসারদের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে অন্য অফিসারদের মুখ খোলার প্রবণতা দেখা যায় না।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর, মিনিয়াপলিসের তৃতীয় পুলিশ স্টেশনের কাছে বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।
সেসময়কার পরিস্থিতি নিয়ে আ্যারাডোনডো বলেন, জীবন বাঁচানোই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য। তিনি কর্মকর্তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেন, কারণ জীবন রক্ষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু ছিল না।
আ্যারাডোনডো মনে করেন, এই ঘটনার পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রমে কিছু পরিবর্তন এসেছে, তবে তা খুবই সামান্য। তিনি স্বীকার করেন, ফ্লয়েডের মৃত্যুর আগে পুলিশ বিভাগে আরও বেশি পরিবর্তন আনা উচিত ছিল।
তিনি বলেন, “আমি যদি আরও আগে কাজ করতাম, তাহলে সম্ভবত সেই রাতের ঘটনার প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন হতে পারত।” জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে নেতৃত্বের ধারণা, ন্যায়বিচার এবং বর্ণবাদ নিয়ে সম্প্রতি আ্যারাডোনডো একটি বই প্রকাশ করেছেন।
বইটির শেষে তিনি ফ্লয়েডের কন্যা জিয়ান্নার প্রতি একটি চিঠি উৎসর্গ করেছেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, “আমি জিয়ান্নাকে জানাতে চাই, আমি দুঃখিত। তার বাবাকে এভাবে হারানোর জন্য আমি দুঃখিত।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস