৫ বছর পরেও জর্জ ফ্লয়েডের কবরে বোনের আকুলতা: ‘আমি আমার সেরা বন্ধুকে হারিয়েছি’

জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পাঁচ বছর পরেও, তাঁর বোন লাতোয়া প্রতি বছর তাঁর কবরে যান, গান করেন আর ভালোবাসেন তাঁর ভাইকে। “আমি আমার সেরা বন্ধুকে হারিয়েছি,” তিনি বলেন।

২০২০ সালের ২৫শে মে, আমেরিকার মিনিয়াপলিসের রাস্তায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক শাউভিনের হাতে নিহত হন জর্জ ফ্লয়েড। এই ঘটনার পর সারা বিশ্বে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন জোরালো হয়, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের ঢেউ লাগে। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত শোকের ঘটনা ছিল না, এটি ছিল একটি বৃহত্তর সামাজিক অবিচারের প্রতিচ্ছবি।

জর্জ ফ্লয়েডের বোন লাতোয়া আজও তাঁর ভাইয়ের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছেন। প্রতি বছর, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুবার্ষিকীতে, তিনি তাঁর কবরে যান। সেখানে বসে তিনি ‘রিও স্পিডওয়াগন’-এর “আই’ল কিপ অন লাভিং ইউ” গানটি গান। গানের প্রতিটি শব্দ যেন তাঁর হৃদয়ের গভীর ক্ষত থেকে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাস।

হিউস্টনের টম বাস পার্কে জর্জ ফ্লয়েডের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, যার নাম “কনভারসেশনস উইথ জর্জ”। লাতোয়া নিয়মিত সেই মূর্তির কাছে যান। ভাইয়ের সাথে কথা বলেন, প্রার্থনা করেন। যেন তাদের মাঝে এখনো সেই আগের মতোই কথোপকথন চলে।

ভাইকে হারানোর বেদনা আজও লাতোয়ার মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। “সময় যত যায়, কষ্টটা যেন ততই বাড়ে,” তিনি বলেন। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে তিনি তাঁর হত্যাকারী ডেরেক শাউভিনকে ক্ষমা করে দেন। সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি আমার মানসিক শান্তি হারাতে বসেছিলাম। ক্ষমা না করলে মুক্তি নেই।

লাতোয়া বর্তমানে জর্জ ফ্লয়েডকে উৎসর্গ করে একটি গান লিখছেন। তিনি চান এমন একজন শিল্পী, যিনি গানের মাধ্যমে তাঁর সমস্ত আবেগ ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। যদিও তিনি নিজে গান ভালোবাসেন, কিন্তু এই গানটি গাওয়ার মতো শক্তি তাঁর নেই।

গানের কয়েকটি লাইন এমন:

“আমি চাই না ২৫শে মে আসুক,
যে দিনগুলোতে আমরা হেসেছিলাম, প্রার্থনা করেছিলাম।
রাতের বেলা হাত ধরে প্রার্থনা করতাম,
আমি চাই না ২৫শে মে আসুক।”

“আমি তাকে বলি, আমরা কীভাবে একসঙ্গে হেসেছিলাম, গান গেয়েছিলাম, আর আমি কীভাবে তাকে ভালোবেসে যাবো। পরিবারের মানুষগুলো যা করে, সেইসব মজাদার স্মৃতিগুলো, যা আমরা আর কখনোই একসাথে করতে পারব না,” লাতোয়া বলেন।

এই শোক আর ভালোবাসার গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রিয়জন হারানোর বেদনা কতটা গভীর হতে পারে। জর্জ ফ্লয়েডের পরিবারের এই লড়াই, আমাদের সমাজে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেয়।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *