**জর্জ ফ্লয়েডের স্মৃতি: ভালোবাসার মানুষগুলোর চোখে তিনি কেমন ছিলেন**
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পাঁচ বছর পার হয়েছে। এই শোকাবহ ঘটনার পর, প্রিয়জনরা এখনো তাকে গভীর ভালোবাসায় স্মরণ করেন।
ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ফ্লয়েড, নিজের জীবনকে নতুন করে সাজাতে এবং একজন ভালো বাবা হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। তার মৃত্যু শুধু আমেরিকাতেই নয়, সারা বিশ্বে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনকে আরও জোরালো করেছে।
জর্জ ফ্লয়েড, যিনি মিনেসোটায় নতুন জীবন শুরু করতে এসেছিলেন, সেখানকার একটি রেস্টুরেন্টে নিরাপত্তা কর্মীর চাকরি করতেন। সেখানে তিনি সবার কাছে একজন নির্ভরযোগ্য এবং সাহায্যকারী মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
জর্জ ফ্লয়েডের ভাই ফিলোনাইজ ফ্লয়েড সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমার ভাইকে জানা মানে তাকে ভালোবাসা। সে ছিল একজন শান্ত মানুষ, কারো ক্ষতি করত না।”
২০২০ সালের ২৫শে মে, মিনিয়াপলিসে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার সময় ৪৬ বছর বয়সী জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হাঁটু দিয়ে এক পুলিশ অফিসার তাকে মাটিতে চেপে ধরেছে এবং ফ্লয়েড ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ বলে আর্তনাদ করছেন।
এরপরই তার চোখ বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এই ঘটনা, কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি মার্কিন বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের অবিচারকে আবারও সামনে নিয়ে আসে।
ফ্লয়েডের মৃত্যু সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দেয়, যা ২০২০ সালজুড়ে চলেছিল।
ফ্লয়েডের পরিবারের সদস্যরা তাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে স্মরণ করেন। তার বন্ধু এবং সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড়, স্টিফেন জ্যাকসন বলেন, “ফ্লয়েড সব সময় চেয়েছিল ভালো কিছু করতে, ভালো বাবা হতে।”
ফ্লয়েডের দুটি কন্যা সন্তান ছিল। জ্যাকসন তাদের দেখাশোনা করার এবং বাবার অভাব পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ফ্লয়েডের কর্মস্থল, কঙ্গো ল্যাটিন বিস্ট্রো’র মালিক জোভানি থুনস্ট্রম বলেন, “ফ্লয়েডকে আমার কর্মচারী ও গ্রাহকরা সবাই ভালোবাসত।”
ফ্লয়েড কর্মীদের সাহায্য করতেন এবং গ্রাহকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। ফ্লয়েডের বান্ধবী কোর্টনি রস জানান, তারা একসঙ্গে প্রার্থনা করতেন এবং কঠিন সময়ে একে অপরের পাশে থাকতেন।
ফ্লয়েডের মৃত্যু শুধু তার পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যেই নয়, অনেকের মনে গভীর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়।
এমনকি ক্রীড়া জগতের অনেক তারকাও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
বাস্কেটবল খেলোয়াড় লেব্রন জেমস, ফর্মুলা ওয়ান তারকা লুইস হ্যামিল্টন, এবং বাস্কেটবল কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডান ফ্লয়েডের প্রতি সম্মান জানিয়ে শোক প্রকাশ করেন।
ফ্লয়েডের পরিবারের সদস্যরা পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, “তারা সেখানে ছিল আমাদের রক্ষা করার জন্য, কিন্তু তারা ফ্লয়েডের জীবন বাঁচানোর জন্য কিছুই করেনি।”
ফ্লয়েডের পরিবারের সদস্যরা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
জর্জ ফ্লয়েডের ভাই টেরেঞ্চ ফ্লয়েড বলেন, “আমি তাকে প্রতিদিন সালাম জানাবো। সে আমাকে শক্তিশালী হতে শিখিয়েছে।”
ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই রায়ের পর ফ্লয়েডের পরিবারের সদস্যরা কিছুটা স্বস্তি অনুভব করেছেন, তবে তারা মনে করেন, সামাজিক অবিচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি।
তারা চান, ভবিষ্যতে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ যেন শুধু গায়ের রঙের কারণে পুলিশের হাতে হত্যার শিকার না হন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন