যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত বিষয়ক একটি প্রস্তাবিত বিল নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই বিলে গর্ভপাতকে কার্যত নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই দেশটির বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
প্রস্তাবিত আইনে নিষিক্ত ডিম্বাণুকে একজন ব্যক্তির মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যার ফলে গর্ভপাতকে হত্যার শামিল হিসেবে গণ্য করা হবে।
জর্জিয়ার আইনসভায় এই বিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে গর্ভপাত-বিরোধী এবং গর্ভপাত-সমর্থনকারী উভয় পক্ষের মানুষজন তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। শুনানি চলাকালে প্রতিবাদকারীরা বিভিন্ন শ্লোগান ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
যদিও চলতি বছরে বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেছে, তবুও এই শুনানির মাধ্যমে বিলটির পক্ষের এবং বিপক্ষের মানুষেরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন।
এই বিলের মূল প্রস্তাবক রিপাবলিকান দলের সদস্য এমোরি ডুনাহু। তিনি বলেন, “প্রতি বছর আমাদের রাজ্যে ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি হিসেবে তৈরি হওয়া হাজার হাজার শিশুর জীবন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, যা বর্তমান আইনের অধীনেই ঘটছে।”
বিলটিতে কিছু ব্যতিক্রমের কথা বলা হয়েছে, যেমন – স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত এবং মায়ের জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এতে চিকিৎসকেরা দ্বিধায় পড়বেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে ভয় পাবেন।
বিলটির বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে জটিলতা দেখা দিলে গর্ভবতী নারীদের জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে। এমনকি, এটি ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) বা পরীক্ষাগারে ভ্রূণ তৈরি প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে।
অনেকের মতে, এই বিলের কারণে নারীর স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি শিয়া রবার্টস তার নিজের জীবনের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, জীবন বাঁচানোর জন্য তাকে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।
আইনপ্রণেতারা এখন পর্যন্ত মাতৃমৃত্যু হারের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা জর্জিয়ার নারীদের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির দিকে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলছেন। চিকিৎসকেরা আরও উল্লেখ করেছেন যে, এই বিল আইভিএফ প্রক্রিয়াকে অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে ফার্টিলিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে, গর্ভপাত-বিরোধী অনেক ধর্মীয় নেতা এই বিলটিকে যথেষ্ট কঠোর নয় বলে মনে করছেন। সব মিলিয়ে, জর্জিয়ার এই বিলটি দেশটির গর্ভপাত বিষয়ক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস