যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যে, নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে, যা তাদের কারাদণ্ডের ভাগ্য পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে। ‘সারভাইভার জাস্টিস অ্যাক্ট’ নামের এই বিলটি মূলত পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যারা নির্যাতনের কারণে কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন।
এই আইনের মাধ্যমে তাদের কারাবাসের মেয়াদ কমানো বা মুক্তির ব্যবস্থা করা হতে পারে।
এই বিলের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, বিচারকদের এমন ক্ষমতা দেওয়া, যাতে তারা নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে সহানুভূতিশীল হতে পারেন।
কোনো নারী যদি নির্যাতনের শিকার হয়ে কোনো অপরাধ করে থাকেন, তাহলে এই আইনের মাধ্যমে আদালত সেই বিষয়টি বিবেচনা করে তার সাজার মেয়াদ কমাতে পারবেন। এমনকি, তাদের মুক্তি দেওয়ারও সুযোগ থাকবে।
এছাড়া, আদালতে নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে আরও বেশি তথ্য-প্রমাণ পেশ করার সুযোগ তৈরি হবে।
এই আইনের প্রেক্ষাপটে, মেরী ফেভার্স নামের এক নারীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মেরী তার স্বামীর দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
এর ফলস্বরূপ, তিনি তার স্বামীকে হত্যা করেন এবং বর্তমানে কারাগারে বন্দী জীবন যাপন করছেন। মেরীর ভাষায়, “ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটেছিল যে, আমার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।”
আইনটি পাস হলে, মেরীর মতো আরও অনেক নারী উপকৃত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জর্জিয়া কোয়ালিশন এগেইনস্ট ডমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর তথ্য অনুযায়ী, কারাগারে বন্দী নারীদের মধ্যে প্রায় ৭৪ থেকে ৯৫ শতাংশই কোনো না কোনো সময় শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার নারীদের অনেকেই আত্মরক্ষার্থে কোনো অপরাধ করেন, কিন্তু তাদের নির্যাতনের বিষয়টি সেভাবে আমলে নেওয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে, তাদের যথাযথ আইনি সহায়তা থেকেও বঞ্চিত করা হয়।
এই বিলের মাধ্যমে আদালত পারিবারিক সহিংসতা, সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহিংসতা, অথবা শিশুদের প্রতি হওয়া নির্যাতনের প্রমাণ পেলে, অপরাধীর সাজা কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এমনকি, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেও এই আইনের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। এই আইনটিকে ‘কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার সনদ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে না, তবে নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
জর্জিয়ার এই বিলটি বর্তমানে সিনেটের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে, রাজ্যের হাউসে এটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে।
এই ধরনের আইন শুধু জর্জিয়াতেই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যেও প্রণয়নের চেষ্টা চলছে। মিসৌরি, কানেকটিকাট এবং ম্যাসাচুসেটস-এর মতো রাজ্যগুলোও অনুরূপ আইন তৈরির কথা ভাবছে।
এছাড়া, নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ওকলাহোমার মতো কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যে এ ধরনের আইন কার্যকর করা হয়েছে।
তবে, এই বিল নিয়ে কিছু দ্বিমতও রয়েছে।
কোনো কোনো জেলা অ্যাটর্নি মনে করেন, এই আইন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে।
তারা আশঙ্কা করেন, এর ফলে ভুক্তভোগীর পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন অবলম্বনে।