আটলান্টার ‘কপ সিটি’ বিতর্ক: বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশ অভিযুক্তরা, ভবিষ্যৎ অন্ধকারে!

আটলান্টা, জর্জিয়া থেকে: যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি প্রস্তাবিত পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জেরে ৬১ জন ব্যক্তির বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় তাঁরা এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের অনেকেই এখন পর্যন্ত কোনো সুবিচার পাননি, বরং মামলার জেরে তাঁদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

২০২০ সাল থেকে আটলান্টার বাইরে ৮৫ একর জমির ওপর প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি) ব্যয়ে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘কপ সিটি’ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এই প্রকল্পের বিরোধিতাকারীদের অভিযোগ, এটি পুলিশের সামরিকীকরণ এবং একটি দরিদ্র ও কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকার পরিবেশের ক্ষতি করবে।

এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা প্রায়ই বিক্ষোভ করেছেন। প্রসিকিউটররা তাঁদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ চক্রের (র‍্যাকেটিয়ারিং) সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন।

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন শ্রমিক, পরিবেশবিদ এবং লেখকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

মামলার শুনানির দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিযুক্তরা। তাঁদের অভিযোগ, বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

এরই মধ্যে অনেকেই তাঁদের চাকরি হারিয়েছেন এবং আর্থিক সংকটে পড়েছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, তাঁরা এখন মানসিক অবসাদে ভুগছেন।

এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রিসিলা গ্রিম। তিনি জানান, মামলার কারণে তিনি চাকরি হারাতে বাধ্য হয়েছেন এবং আর্থিক সহায়তা চেয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে হচ্ছে।

তাঁর মতে, “আসলে, আমি মনে করি, আমাদের জীবনটা কোনো না কোনোভাবে থমকে গেছে।

আরেক অভিযুক্ত জুলিয়া ডুপুইস। তিনি বর্তমানে ম্যাসাচুসেটসে বসবাস করেন। তিনি জানান, এই মামলার কারণে জর্জিয়াতে তাঁর প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ফলে তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করতে পারছেন না এবং তাঁর পক্ষে ৬৫০ ডলার ভাড়ার যোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

আরেক অভিযুক্ত হলেন হান্না কাস। তিনি একজন গবেষক। প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

তিনি জানান, মামলার কারণে তাঁর কর্মজীবনের ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি উদ্বিগ্ন।

মামলার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে আইনজীবীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, মামলার বিলম্বের কারণে সাক্ষ্য-প্রমাণ দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

২০২৩ সালে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে ম্যানুয়েল এস্তেবন পায়েজ টেরান (যিনি ‘টর্টুগুইটা’ নামে পরিচিত) নিহত হন। এই ঘটনা প্রতিবাদের আগুনে ঘি ঢেলেছিল।

কর্তৃপক্ষের দাবি, টর্টুগুইটা গুলি চালালে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি চালায়। যদিও একটি ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, টর্টুগুইটা যখন হাত তুলে আত্মসমর্পণ করছিলেন, তখনই তাঁকে গুলি করা হয়।

এই মামলার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আইনজীবীরা মনে করছেন, প্রসিকিউটরদের দুর্বলতার কারণে মামলাটি হয়তো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়বে।

তবে অভিযুক্তদের জীবন এরই মধ্যে থমকে গেছে, যা তাঁদের জন্য চরম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *